জাফলং (গোয়াইনঘাট) ঘুরে: জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এরইমধ্যে দেশের উত্তর-পূর্ব সিলেটের জাফলং বেশ নাম কুড়িয়েছে। তবে পাহাড়-নদী আর চির সবুজ এ জনপদের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বোমা’ মেশিন।
নিষিদ্ধ এ মেশিনের করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের সৌন্দর্য। স্বচ্ছ পিয়াইনের বুক থেকে পাথর তোলায় ভাঙছে নদীর তীর, বাড়ি-ঘর ও সমতলে স্থাপিত দেশের প্রথম চা-বাগানের ভূমি।
বিকট আওয়াজে দিনরাত পাথর উত্তোলনের কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের আধার জাফলংয়ের প্রকৃতি। সম্প্রতি সরেজমিনে জাফলংয়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, পাথর কোয়ারি এলাকায় একসময় সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করা হতো। স্বচ্ছ পানিতে নেমে হাত দিয়ে পাথর নৌকায় রাখতেন শ্রমিকরা। পরে তা ঠেলে কিংবা বৈঠা দিয়ে তীরে নিয়ে আসা হতো। পাথর উত্তোলনের কর্মযজ্ঞে হাজার হাজার শ্রমিকের উপস্থিতি আর বারকি (লম্বা নৌকা) নৌকার আনাগোনা পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি জাফলংয়ের পরিবেশ-প্রতিবেশেরও।
কিন্তু কম সময়ে অধিক লাভের আশায় মুনাফালোভীরা ২০১০ সাল থেকে পাথর উত্তোলনে বোমা মেশিনের ব্যবহার শুরু করে। যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পাথর উত্তোলনের সময় বিকট আওয়াজ হয় বলে এই যন্ত্রকে ‘বোমা’ মেশিন বলেই ডাকেন স্থানীয়রা।
জাফলং বাজারের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী আবদুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, বড় বড় পাইপ দিয়ে মাটির প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর থেকে পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে পাথর তোলা হয়। এতে তীরের জমি-জমা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সিলেট-জাফলং সড়কে এগোলেই তামাবিল সীমান্ত থেকে সড়কের দু’পাশে চোখে পড়বে পাথরের স্তূপ। স্তূপের পাশেই রয়েছে পাথর ভাঙার ক্র্যাশিং মেশিন। আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলেই মামুর বাজার পয়েন্ট। সেখানে থেকে সামনে বল্লাঘাট জিরোপয়েন্ট, বামের সড়কটি চলে গেছে জাফলং বাজারে।
বাজারের পূর্ব দিকসহ নদীর বিভিন্ন এলাকায় বসানো হয়েছে বোমা মেশিন। বড় বড় পাইপ বসিয়ে মাটির অনেক গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী তীরের সমতল ভূমিতে জাফলং চা-বাগানের ভূমি ধসে গেছে।
চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক বাংলানিউজকে বলেন, নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ একর ভূমি। এছাড়া প্রতিদিনই একটু একটু করে ভাঙছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পিয়াইন নদীর ওপারে আদিবাসী পল্লী সংগ্রামপুঞ্জি। নদী বেষ্টিত জনপদটিও নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। স্থানীয় আদিবাসী নেতা মাতি শর্মা বলেন, বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে আমাদের পুরো ভূমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় সংগ্রামপুঞ্জির বেশ কিছু এলাকা নদী ভাঙনের শিকার হয়। পরে নদীতে একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গভীর থেকে পাইপের মাধ্যমে পাথর উত্তোলনের ফলে নিচে ফাঁকা হয়ে ভূমি ধসের মতো ঘটনা ঘটে।
প্রতিরক্ষা বাঁধটিও ধসের ঝুঁকিতে আছে। নদীতে নৌকা ভ্রমণ করে দেখা যায়, খাসিয়া অধ্যুষিত সংগ্রামপুঞ্জির প্রতিরক্ষা বাঁধের বেশ কিছু জায়গায় তা ভেঙে গেছে। কোথাও দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আলী বলেন, বর্ষায় নদীতে পানি বেশি হওয়ায় একসপ্তাহ ধরে বোমা মেশিন বন্ধ। পানি কমলেই ফের মেশিন বসানো হবে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বোমা মেশিন নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও এখনও বন্ধ হয়নি পরিবেশ বিধ্বংসী এ মেশিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি সদস্য বলেন, ‘টাস্কফোর্সে’র মাধ্যমে আমরা অভিযান চালিয়েও কোনো ফল পাইনি। তবে এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, বোমা মেশিন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৬
এমএ/
**‘কাঁদছে’ হাছন রাজার জন্ম পিঞ্জিরা
**অভাব ঘুচেছে পশু চিকিৎসক ফারুকের
**আগর থেকে আতর
**‘যন্ত্র-দেয়াল’ ভাঙছে সিলেটের ‘ওসমানী শিশু উদ্যান’
** এখনও সময় জানায় আমজাদের সেই ঘড়ি
**পর্যটন বর্ষের প্রচারণা নেই মাধবকুণ্ডে
** ঝরনার পাহাড়ে ফাটল, সতর্ক হোন
**জাফলং পর্যটনে বাধা ‘সড়ক’
**অযত্নে-অবহেলায় আদিত্যপুর গণকবর
**যাত্রীর ইয়ার্ডে পাবলিকের কার পার্কিং
** ফাংশন নেই শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে
** সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে
** দু’টি পাতার একটি কুড়ির নিচেই অন্ধকার
** পর্যটনে আকর্ষণ তারাও
** স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’