লালাখাল ঘুরে: ছবিতে দেখা লালাখালের সঙ্গে আমাদের দেখা লালাখাল মিলছিলো না কিছুতেই। স্বচ্ছ পানিতে নীল আকাশের রং, দু’পাশে লালমাটির টিলা, সবুজ বন, দূরে ভারতের মেঘালয়ের মেঘমাখা পাহাড়- এটাই লালাখাল।
ভারতের লোভাছড়ি নদী থেকে উৎপন্ন এই লালাখাল মূলত সারি গোয়াইন নদী। এই নদী এখানে বাংলাদেশে প্রবেশের পর জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ ও সিলেট সদর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোম্পানিগঞ্জে পড়েছে সুরমায়। বাংলাদেশে প্রবেশ মুখের কাছে এর নাম লালাখাল। একটু ভাটিতে গিয়ে সিংগার খাল নাম নিয়েছে বাদাম ঘাটে। সব মিলিয়ে মাত্র ২৫.৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সারি গোয়াইননের।
অনেক চাপাচাপি করে ৭শ টাকা চুক্তিতে কিশোর চালক শান্তর নৌকায় চেপে উত্তর পূর্ব দিকে নদীর প্রবাহ যে বাঁকে থমকে আছে চোখের সীমানায় সেখানে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘালয়ের পাহাড়। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিপাতের স্থান চেরাপুঞ্জি সে পাহাড়ের কাছাকাছি সীমায়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের স্থান এই লালাখাল। গায়ে, মুখে, ক্যামেরার লেন্সে বারবার ছিট লাগানো মিষ্টি বৃষ্টি স্থান কাল পাত্রভেদে যেন সোনায় সোহাগা তখন। দুপাশের সবুজ যেন হাসছে। মাথাল মাথায় মাঝিদের ছুটেচলা এরই মাঝে। ভরাযৌবনা নদীর বাড়তি রূপ যুগিয়েছে তারাও।
সারির বুকে টালমাটাল শান্তর নৌকা জিরো পয়েন্ট ঘুরে ফের রওয়ানা দিলো ভাটির দিকে। নৌকা ভেড়ার কথা লালাখাল বাজার ঘাটে। তবে অনেকটা আঘাটায় নৌকা ভিড়িয়ে শান্ত উদ্বুদ্ধ করলো লালাখাল চা বাগান দেখতে। সারি নদীর একটি শাখা অর্থাৎ, খাল পাড়ে এ চা বাগান। ঘাট থেকে উঠেই একটি কালি মন্দির। পাশ দিয়ে বাগানের রাস্তা।
গতানুগতিক চা বাগানের সঙ্গে মেলে না এ বাগানের রূপ। বাগানটি বনের মতো। বড় বড় গাছঘেরা। টিলাগুলোও বেশ উঁচু। আর সারি বেঁধে রোপণ করা চা গাছগুলো যেন একে অন্যের সতীন। সব দূরে দূরে! গা ঘেঁষাঘেঁষি করে পরস্পরের আপন হয়ে দাঁড়িয়ে নেই তারা।
ততক্ষণে ঘণ্টা দুয়েক পেরিয়ে গেছে। আকাশ ভেঙে পানি পড়ছে তখনও। যেন জানান দিচ্ছে বৃষ্টির দেশে এসেছো শ্রাবণে, থামি কি করে। নদী, টিলা, খাল, বনের সমন্বয়ে এমন চা বাগান আর আছে কিনা জানা নেই।
এ বাগানের ছয়শো শ্রমিকের অধিকাংশই বাঙালি। বাগান থেকে যখন ফিরছি তখন কারখানার ঠিক নিচ দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে বাগানে, সে রাস্তায় দেখা তিন শ্রমিকের। মাথাল মাথায় বৃষ্টি মেখে বাগানে ছুটছে তারা।
এখানে চায়ের ফ্যাক্টরি দেখতে বাধা নেই। যে কেউ ঘুরে দেখতে পারেন। কারখানা ঢোকার মুখেই দেখা গেলো বাগান থেকে আনা পাতা গাড়ি থেকে ফেলা হচ্ছে মাটিতে। এ পাতাই ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর সরাসরি চলে যাবে ব্লেন্ডিংয়ে। পুরো প্রক্রিয়া দেখে সব ভালো লাগলেও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সন্দেহ জাগলো মনে।
টিলার উপরের কারখানা থেকে নেমেই বড় একটি মাঠ। মাঠের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে মিনিট সাতেক হাঁটলেই লালাখাল বাজার। খুব বড় না। স্কুল আছে একটি। রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকানঘর। ৮০ টাকায় দুই ডজন স্থায়নী কলা কিনে উঠে পড়লাম নৌকায়।
শুকনোর লালাখাল দেখিনি। তবে বৃষ্টিদেশের বৃষ্টির লালাখাল সত্যি অপরূপ রূপসী। কেউ যদি কখনও জিজ্ঞেস করে লালাখাল কোন মৌসুমে যাবো, উত্তরে আষাঢ়-শ্রাবণ ছাড়া অন্য কিছু বলবো না।
** গাইডরাই চেনাবেন লাউয়াছড়া অভয়ারণ্য
** বানর-বেবুন-অজগর মানে না রেলের চাকা
** গাড়ির চাকায় পিষে যায় লাউয়াছড়ার প্রাণীপ্রাণ
** এক লেবুর দাম হাজার টাকা!
** সবুজের বুকে মোহময় শার্ফিন
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৪ (শেষ পর্ব)
** ছবিতে হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ি
** ‘কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার’
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৩
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-২
** হাওরের হাঁসে হাসি
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-১
** মায়ার বাঁধনে মায়া, সঙ্গী জেমস-মনা
** এবার আসছে গৌরাঙ্গের সাত লেয়ারের জুস
** সবুজের বুক চিরে চেনা নতুন শ্রীমঙ্গল
** নাগা মরিচের আরও ছবি
** সাদা-কালো নাগা মরিচে গিনেস রেকর্ডের ঝাল
** তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
** রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
** পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
** চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৬
এএ