মাগুরছড়া (শ্রীমঙ্গল) গ্যাস ফিল্ড ঘুরে: এরইমধ্যে পেরিয়ে গেছে বিস্ফোরণের ১৯ বছর। তবুও ভয়াবহ সেই বিপর্যয়ের দগদগে ক্ষত বয়ে চলছে দগ্ধ মাগুরছড়া।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তা পায়নি ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া ও কমলগঞ্জের পরিত্যক্ত মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্র ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেলো।
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল সদরের চৌমুহনী থেকে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে কমলগঞ্জের ভানুগাছ যাওয়ার পথে মাগুরছড়া গ্যাস ক্ষেত্র। ক্ষেত্র বলতে এখনও কিছু ‘নিষিদ্ধ’ এলাকা ঘের দিয়ে রাখা হয়েছে। রয়েছে পুড়ে যাওয়া কিছু পাইপসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও।
সূত্র বলছে, মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া গ্যাসকূপ খননের কাজ করার সময় ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
খননকাজ কূপের ৮৫০ ফুট গভীরে পৌঁছুলে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রায় পাঁচশ’ ফুট উচ্চতায় লাফিয়ে ওঠে আগুন। এ সময় উদ্যানের গাছপালা, মাগুরছড়া পানপুঞ্জি, ফুলবাড়ী চা-বাগানের একাংশ, ঢাকা-সিলেট রেললাইন, ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কপথ, বিদ্যুৎ লাইনসহ আশপাশের এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পুড়ে যায় বনের সেগুন প্রজাতির গাছ, বাঁশ, অন্যান্য প্রজাতির বৃক্ষ, বৃক্ষলতাদিতে আচ্ছাদিত ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বনাঞ্চলও। যার ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এসব জীব বৈচিত্র্যকে।
লাউয়াছড়া ফরেস্ট বিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিমাণ ছিলো ৮৭ দশমিক ৫০ একর। অনেক জীবজন্তু ও গাছপালা মারা যায়। পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের ২৮টি চা বাগান ও জনপদ। যা এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেনি। ’
গ্যাসের আগুনে পুড়ে যাওয়া রেল লাইনের পাশে অনেক গাছে এখনও পাতা গজায়নি। কোনো কোনো জায়গায় নতুন করে লতা-গুল্ম কিংবা গাছও হয়নি। ক্ষত চিহ্ন রয়েছে ফুলবাড়ী চা বাগানেও। বিস্ফোরণের মূল জায়গায় ডোবার মতো সৃষ্টি হয়, যেখানে পদ্ম ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে।
‘ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ ১৫ কিলোমিটার (৩৩ হাজার কেভি) বৈদ্যুতিক লাইনও। এ ছাড়াও পুড়ে যায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাস। ’
স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, আগে লাউয়াছড়া উদ্যানে মাটিতে বিচরণকারী কচ্ছপ ও প্রচুর জংলি খরগোশ দেখা যেতো। কিন্তু গ্যাস ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের পর সেভাবে তা পাওয়া যায় না। কমে গেছে ছড়ায় বিচরণের অনেক জলজ প্রাণীও।
ভরা বর্ষা মৌসুমেও এসব ছড়ায় এখন পানি থাকে না। আধিপত্য থাকে লালচে বালুর! ‘লাউয়াছড়ার পানি আগে কখনও শুকায়নি, কিন্তু এখন শুষ্ক মৌসুম দূরে থাক, বর্ষাতেও পানি থাকে না,’ বলছিলেন উদ্যানের কর্মচারী জহির উদ্দিন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিস্ফোরণে প্রত্যক্ষ ক্ষতি ৩২ দশমিক ৫৩ কোটি ও পরোক্ষ ক্ষতি মিলিয়ে মোট ১৭৬ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা। ওই সময় অক্সিডেন্টালের কাছে মোট ৬০৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
স্থানীয়ভাবে কয়েকজন আংশিক ক্ষতিপূরণ পেলেও বন বিভাগ তা পায়নি বলে জানালেন মৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান। অগ্নিকাণ্ডের পর ১৯৯৯ সালের আগস্টে মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রসহ ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় যন্ত্রপাতি আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইউনিকলের কাছে হস্তান্তর করে অক্সিডেন্টাল।
দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্ষতিপূরণ দেয়নি ইউনিকলও। পরে মাগুরছড়া পরিত্যক্ত কূপ এলাকার প্রায় ৩’শ গজ পশ্চিমে নতুন করে একটি ও জেরিন চা বাগানের ভেতরে আরেকটি কূপ খনন করে সংস্থাটি।
বর্তমানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে কালাছড়া গ্যাস কূপের সঙ্গে সংযুক্ত করে জাতীয় গ্রিড লাইনে অব্যাহতভাবে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করছে ইউনিকল। বর্তমানে মাগুরছড়ার দায়িত্ব নিয়েছে শেভরন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৬
এমএ/
**‘বোমা’ মেশিনে মলিন জাফলংয়ের সৌন্দর্য
**‘কাঁদছে’ হাছন রাজার জন্ম পিঞ্জিরা
**অভাব ঘুচেছে পশু চিকিৎসক ফারুকের
**আগর থেকে আতর
**‘যন্ত্র-দেয়াল’ ভাঙছে সিলেটের ‘ওসমানী শিশু উদ্যান’
** এখনও সময় জানায় আমজাদের সেই ঘড়ি
**পর্যটন বর্ষের প্রচারণা নেই মাধবকুণ্ডে
** ঝরনার পাহাড়ে ফাটল, সতর্ক হোন
**জাফলং পর্যটনে বাধা ‘সড়ক’
**অযত্নে-অবহেলায় আদিত্যপুর গণকবর
**যাত্রীর ইয়ার্ডে পাবলিকের কার পার্কিং
** ফাংশন নেই শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে
** সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে
** দু’টি পাতার একটি কুড়ির নিচেই অন্ধকার
** পর্যটনে আকর্ষণ তারাও
** স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’