ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

খাগড়াছড়িতে সিস্টেমে বাঁশ!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
খাগড়াছড়িতে সিস্টেমে বাঁশ! ছবি: আসিফ আজিজ

খাগড়াছড়ি থেকে: বাঁশকে সবসময় নেতিবাচকভাবে না নেওয়াই ভালো। কারণ পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি এলে আপনি নিজেই বাঁশ খেতে চাইবেন।

সেটা আবার সিস্টেমে! তবে এই সিস্টেম সেই সিস্টেম নয় কিন্তু! বলছি শহরে অন্যতম সেরা মারমা রেস্টুরেন্ট সিস্টেমের কথা। এখানকার রান্না বাঁশের কোড়ল না খেলে সত্যি পস্তাবেন।
 
শহরের পানখাইয়া মারমা পাড়ার এ ঘরোয়া রেস্টুরেন্টটি সাজানো হয়েছে একেবারে পাহাড়ি খাবারের মেন্যুতেও পাহাড়ি মুন্সিয়ানায়। তবে সব ছাপিয়ে বাঁশ হয়ে উঠেছে এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় মেন্যু। মুলি বাঁশ, তল্লা বাঁশসহ পাহাড়ে জন্মানো বিভিন্ন বাঁশের কোঁড়ল অর্থাৎ বড় বাঁশের গোঁড়া থেকে বের হওয়া নতুন কচি বাঁশ দিয়ে ভাজি ও রান্না পদ। খেতে বেশ সুস্বাদু, স্বাদ ভিন্ন। তবে মিলবে মূলত বছরের তিন থেকে চারমাস। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।


 
এখন বাঁশের পিক সিজন। বলছিলেন রেস্টুরেন্টটির স্বত্বাধিকারী মং মারমা। একটি টেবিল পেতে একযুগ আগে রাস্তার পাশে বসে চা বেচতেন তিনি। সেখানে বিপদে পড়ে কখনো সখনো কেউ ভাত খেতে চাইতেন। এসে বলতেন দাদা একটু দেখেন না সিস্টেম করে দেওয়া যায় কিনা। একবার দিলে পরে এসে আবার কেউ হয়তো বলতেন দাদা সেবারের মতো একটু সিস্টেম করে দেন না। এভাবে বাড়তে থাকে দুই চার, ছয়জনের  পরিসর। তারপর ২০১০ সালে নিজ বাড়ির সামনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট সিস্টেম। কোনো সাইনবোর্ডও ছিলো না। সম্প্রতি একটি কোম্পানি জোর করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে বলে জানান এ উদ্যোক্তা।


 
মং বলেন, আমাদের সব আইটেমে পাহাড়ি ঐতিহ্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বাঁশ কোড়ল ছাড়াও ব্যাম্বু চিকেন এখানের জনপ্রিয় পদ। এটি আগে অর্ডার করলেই বানানো হয়। মূলি বাঁশের ফালির মধ্যে একসঙ্গে ৫শ টাকার মাংস রান্না করা যায়। খেতে পারবেন পাঁচজন।
 
এখানে অন্য আইটেমের মধ্যে রয়েছে কলা মোচা ভর্তা, কাঁচা হলুদ ভর্তা, ছোট মাছ দিয়ে হলুদ ফুলের সবজি, কলাপাতা মোড়ানো ছোট মাছ, কলমি ভর্তা, থানকুনি পাতা ভর্তা, মজাদার ডিম মাশরুম, বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি সিদ্ধ সবজি, চিকেন গুরদানি, পাহাড়ি হাঁসের মাংসের কালাভোনা, কাঁচকি ফ্রাই ও ভর্তাসহ বিভিন্ন মজাদার সুস্বাদু পদ।


 
রয়েছে কয়েক ধরনের জুস। তেতুল, আমলকি, জলপাইয়ের মতো কিছু অপ্রচলিত জুস মিলবে এ রেস্টুরেন্টে। স্বাদেও চমৎকার। দাম একটু বেশি হলেও পর্যটকরা এলে সিস্টেমে যেতে ভোলেন না। একসঙ্গে জনা পঞ্চাশেক লোক বসতে পারে রেস্টুরেন্টটিতে। বেশি লোক হলে আগে থেকে ফোন করে বুকিং দিতে হয়। গড়ে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিনশো লোক আসেন সিস্টেমে। এখানে আলাদা কোনো ওয়েটার নেই। সবই মং পরিবারের সদস্য। খাওয়ানোর সময়ও তাই পাওয়া যায় পারিবারিক আন্তরিকতা।


 
স্বত্বাধিকারী মংকে শহরের বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয় বিশেষ সব পদ রান্নার জন্য। সে প্রমাণ মিললো পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথার সময়ও। শহরের উচ্চ পর্যায়ের সবাই চেনেন সিস্টেম।
 
কাস্টমারকেও অতিথিসেবা দিতে খেয়েদেয়ে বের হওয়ার দরজার মুখে একটি টুলে রাখা হয়েছে পান আর পানিভেজা আমলকি। যে কেউ চাইলে মুখে একটি পান অথবা আমলকি দিয়ে সানন্দে যেতে পারেন পরবর্তী গন্তব্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
এএ/এসএনএস

**
রোদেলা বিকেলে দেড় কেজি রূপচাঁদায় নৈশভোজ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ