খাগড়াছড়ি থেকে: চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের দু’ধারে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে আমাদের মোবাইলের চার্জের ত্রাহি অবস্থা। ভেবে রেখেছিলাম রেস্ট হাউসে পৌঁছে প্রথম মোবাইল চার্জ দিতে হবে।
কিন্তু দুপুরে জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসে পা রাখতেই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হলো। বাংলানিউজের স্থানীয় প্রতিনিধি অপু দত্ত জানালেন, ভাই কোন ঠিক ঠিকানা নেই কখন বিদ্যুৎ যায়-আসে। খানিকটা জোকস করে বললেন, এখানে বিদ্যুৎ যায় না মাঝে মাঝে আসে।
আরও জানালেন, আপনারা কিন্তু রাতেই মোবাইল ল্যাপটপ চার্জ দিয়ে রাইখেন। কাল শনিবার ও সোমবার সারাদিন বিদ্যুৎ থাকবে না। সকাল ৭ টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে, চালু হবে বিকেল ৫ টার পর। প্রায় ১০ মাস ধরে এই রুটিনে চলছে খাগড়াছড়ি।
শহরের কোথাও থাকে না বিদ্যুৎ! জানা গেল, হাটহাজারি থেকে পুরো ফিডারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলা ও রাঙ্গামাটির তাইমদং, বাঘাইছড়ি, বাঘাইহাট পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তার এই কথা শুনে একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। সবার মুখেই বিস্ময় কি হতে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে চলবে কি করে। মোবাইল না হয় পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে চালিয়ে নিলাম। কিন্তু ল্যাপটপ না চললে অফিসে নিউজ পাঠাব কেমনে।
বন্ধ থাকার কারণ হিসেবে জানালেন পুরনো এই লাইনটি চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। বন্ধ করে দিয়ে সংস্কার কাজ করা হয়। সে কারণে ভবিষ্যত সুখের আশায় জনগণ এই ভোগান্তি মুখ বুজে সহ্য করছে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত জুনে। কিন্তু আরও কতদিন লাগবে সে বিষয়ে বিদ্যুতের লোকজনও নাকি সঠিক কোন জবাব দিতে পারছে না অভিযোগ করলেন খোদ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানও।
তিনি বাংলানিউজকে জানালেন, ‘জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা চরমভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই মাসে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী আরও আর ২ মাস সময় চান। আমরা তাদের বলেছি দুই মাস নয়, তিন মাস সময় দেওয়া হলো কিন্তু এর মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। তখনও তারা গাইগুই করেছে’।
ফিরে আসি দুপুরের দৃশ্যপটে। বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষার পালা খুব একটা দীর্ঘ হল না । আমাদের ভাগ্য না-কি প্রসন্ন বলেও জানালেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। কিন্তু ফ্যান যেভাবে ঘুরছিল তাতে মনে হচ্ছিল রেগুলেটরে কোন সমস্যা রয়েছে অথবা ফুল ভলিউমে দেওয়া নেই।
সহকর্মী আসিফ আজিজ কতক্ষণ কসরত দেখালেন ভলিউম বাড়ানোর জন্য। ব্যর্থ হলে আমিও কতক্ষন রেগুলেটরের নব ঘোরাঘুরি করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো। কোন দিক দিলে স্পিড বাড়ছে সেটাই বুঝতে পারলাম না। একবারতো বাড়বে মনে করে সুইচ দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে দেখি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেলো। পরে আবার কতক্ষণ কসরত পোহাতে হল।
পাশের রুমে ছিলেন বাংলানিউজের সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল ও স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মবিনুল ইসলাম। জাকারিয়া মন্ডল বললেন, ‘আমাদের রুমের ফ্যানগুলো ভালো না। খুবই ধীরে ঘুরছে গায়ে বাতাসেই লাগছে না’।
মিনিট বিশেক পরেই আবার লোডশেডিং শুরু হল। এরপর এই আছে এই নেই। কোন বারেই টানা ২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলো না। খোদ জেলা সদরের এই অবস্থা। এ কারণে না-কি পর্যটকরা এখানে এলে থাকতে চায় না। যত দ্রুত সম্ভব ফিরে যাওয়ার জন্য তৎপর থাকে।
রাত ৮ টায় পুলিশ সুপারের বৈঠকে এক ঘণ্টায় ১৫ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা রেকর্ড করা হয়। রাতে নাকি জঙ্গল ঠেলে বিদ্যুৎ এখানে আসতে পারে না...।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
এসআই/আরআই