বান্দরবান থেকে: পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। আপন হয়ে উঠতে হবে।
এ কথা বলছিলেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায়। সোমবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তিনি।
সদ্যই বান্দরবানের এসপি পদে যোগ দিয়েছেন সঞ্জিত কুমার। এর আগে তিনি ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি)।
পুলিশ সুপার হিসেবে বান্দরবানে প্রথম দায়িত্ব তার। সে কারণে বেশ কিছু ভাবনার কথা বলেন সঞ্জিত কুমার। প্রকাশ করেন বান্দরবানকে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়তে চাওয়ার ইচ্ছেও। যেখানে পুলিশ-জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। তিনি জানান, ডিএমপি প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন দিক থেকে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে অর্জিত অভিজ্ঞতা বান্দরবানে কাজে লাগাতে চান সঞ্জিত কুমার।
তিনি বলেন, একটা সময় ছিল, পুলিশ বাহিনীকে মানুষ অনেক দূরের ভাবতো। কিছুটা হয়তো আতঙ্কিতও থাকতো। এখন সেই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। আরও কিছুটা কাজ বাকি রয়েছে।
সঞ্জিত কুমার বলেন, আমার প্রধান কাজ হবে পুলিশের ভাবমূর্তি বাড়ানো। জনগণ যেন পুলিশকে বন্ধু মনে, আপন করে নেয়। জনগণ পুলিশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়।
এ লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং এবং জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথাও জানালেন এসপি।
তিনি বলেন, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং সব ধরনের পুলিশ ভেরিফিকেশন অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। কেউ জিডি করলে খুব দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাজে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে ডিএমপির মতো ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। এখানে একটি পয়েন্ট থেকেই প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হবে।
এসপি জানান, জেলায় কুইক রেসপন্স টিম গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ পুলিশের দ্বারস্থ হলে তাকে তৎক্ষণাৎ সহায়তা দিতে হবে। ঘটনাস্থলে পৌঁছতে যেটুকু সময় লাগে এর বেশি কালক্ষেপণ করলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। পর্যটনের উন্নয়নে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সঞ্জিত কুমার বলেন, যে কোনো উন্নয়নের জন্য নিরাপত্তা জরুরি। পর্যটনের উন্নয়নে নিরাপত্তা ইস্যু খুবই জরুরি। মানুষ কোথাও যাওয়ার আগে প্রথম চিন্তা করে তার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে। একইভাবে বিনিয়োগকারীরাও প্রথম চিন্তা করে নিরাপত্তা নিয়ে। পুলিশ প্রশাসন সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে।
এসপি জানান, বান্দরবানের সবগুলো পর্যটন স্পর্ট পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে। চিম্বুক, থানছি, নীলগিরি ও নীলাচলসহ সর্বত্র পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিএসবির মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে। সব এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও প্রয়োজনে আর্চওয়ে বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি পুলিশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী অনেক দক্ষ বাহিনী। এ বাহিনী আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টে হামলা, শোলাকিয়ায় হামলা এবং কল্যাণপুরের ঘটনায় খুব দ্রুততার সঙ্গে দোষীদের চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অনেককে এরইমধ্যে বিচারের মুখোমুখি করে সক্ষমতার দৃষ্টান্ত দিয়েছে আমাদের বাহিনী।
বান্দরবান নিয়ে স্বপ্নের ভাবনা জানিয়ে সঞ্জিত কুমার বলেন, চাকরিজীবীদের যেমন ইচ্ছে করে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি চলে যাওয়ারও সুযোগ নেই। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে অন্যত্র চলে যেতে হবে এটাই নিয়ম। তবে যাওয়ার আগে ভালো কিছু করে যেতে চাই বান্দরবানের জন্য।
তার সঙ্গে বাংলানিউজের আলাপচারিতায় উপস্থিত ছিলেন জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সম্পা রানী সাহা।
তিনি বলেন, জেলা পুলিশ পর্যটনের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটকদের কাছে আমাদের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে, তারা যেন ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলেন। তারা যেন পরিবেশটা ভালো রাখেন।
সম্পা রানী জনগণের উদ্দেশে বলেন, প্রয়োজনে বন্ধু মনে করে পুলিশের কাছে আসুন। পুলিশ সহায়তা দিতে সদা প্রস্তুত।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
এসআই/এইচএ/
আরও পড়ুন
** পাহাড়িরা আর পর্যটন বিমুখ নন: ডিসি বান্দরবান