তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস থেকে: ‘‘ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে,/ রাত দুপুরে অই/ ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে/ট্র্রেনের বাড়ি কই?” কবি শামসুর রাহমানের ট্রেনের বাড়ি খোঁজার এই ছড়াটা টুপসির পুরো মুখস্ত। ছড়াটা পড়তে পড়তেই সে ভাবতো, কবির মতো সেও একদিন ট্রেনের বাড়ি খুঁজতে নামবে!
আজ ঠিকই টুপসি ট্রেনে চড়েছে, ট্রেনের বাড়ি খুঁজতে।
বুধবার (১২ অক্টোবর) রাতে তূর্ণা এক্সপ্রেসের ‘ঘ’ বগিতে কথা হচ্ছিল চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া টুপসির সঙ্গে। মা-বাবার সঙ্গে বান্দরবান বেড়াতে যাচ্ছে সে। তূর্ণা এক্সপ্রেসের ওপাশের বাড়ি চট্টগ্রাম নেমে সেখান থেকে বান্দরবান যাবে সে।
টুপসি বলছিল, কবি শামসুর রাহমানের ট্রেন চলেছে ছড়াটা আমার মুখস্ত। যতবার পড়েছি, বইয়ে ট্রেনের ছবি দেখেছি, ততবার ট্রেনে ওঠার ইচ্ছে জেগেছে। এখন ট্রেনে চড়েই বান্দরবান যাচ্ছি।
নিশুতি রাতের নৈঃশব্দ ভেঙে তূর্ণার এই যাত্রা দারুণ অনুভূতি দিচ্ছে টুপসিকে। সেটা তার কথা আর উচ্ছ্বাসেই প্রকাশ পাচ্ছে।
‘অনেক ভালো লাগছে। ট্রেনে এই প্রথম যাচ্ছি। জোরে ছোটার সময় ট্রেনের ঝকঝক শব্দ বেশি আনন্দ লাগে। দিনে যেতে পারলে আরও হয়তো সুন্দর হতো। চারপাশের সবকিছু দেখা যেতো। তবু রাতের এই শান্তভাবও ভালো লাগছে ‘ বলছিলো এগারো বছরের টুপসি।
টুপসির বাবা সাঈদ হোসেন। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। মেয়েকে প্রথম ট্রেনে নিয়ে বান্দরবান ঘুরতে যাচ্ছেন বলে তারও ভালো লাগছে। আর এই ভালো লাগাটা মেয়ের উচ্ছ্বাস দেখেই।
সাঈদ বলেন, ট্রেন জার্নিটা এমনিতেই অপেক্ষাকৃত দারুণ। মেয়েকে এতো হাসিখুশি দেখলে আরও ভালো লাগে। এখন বান্দরবান ভ্রমণটা সুন্দর হলে আরও ভালো লাগবে।
টুপসি-সাঈদদের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের ‘ঙ’ বগিতে ফেরার পথে কথা হলো আরও বেশ ক’জন যাত্রীর সঙ্গে। এদের একজন আলিফ। রাজধানীর একটি কলেজের ছাত্র। পাঁচ বন্ধু মিলে সাজেক যাচ্ছেন বেড়াতে।
আলিফ বলেন, তূর্ণা এক্সপ্রেসের সুনাম আগেও শুনেছি। এবার নিজেই দেখছি। পরিবেশও যাত্রীবান্ধব দেখা যাচ্ছে। তিনি অভিমত, দেন সবকিছু মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও খাবারের দামটাই রাখা হচ্ছে বেশি। আলিফদের ‘ঙ’ বগিতে তখন চিপস বিক্রি করছিলেন ক্যাটারিং সার্ভিসের একজন। ২৫ টাকার চিপস বিক্রি করছিলেন ৩০ টাকায়।
৫ টাকা বেশি কেন জানতে চাইলে ওই বিক্রেতা আলিফকে বলতে থাকেন, ‘এসিতে যাচ্ছেন। ৫ টাকা বেশি দিলে কী হয়?’
আলিফ সেই কথার সূত্র ধরে বললেন, ‘কেবল চিপসই নয়, কফি-চা, অন্যান্য নাস্তার দাম চড়া। না জেনে অনেকেই কেনেন, তবে দাম শুনে তাদের মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা। ’
দাম চড়া হওয়ায় যা্ত্রীদের ট্রেনের খাবারের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। অনেকেই চিপস, পানীয় কোনো স্টেশনে থামলে সেখান থেকেই কিনে নিচ্ছেন। তবে উচ্চমূল্য হলেও চা কিনে কাপে চুমুক দিতে দিতে রাতের জার্নিকে সুখকর করতে অনেক যাত্রীই আলাপ জমিয়েছেন পাশের যাত্রীর সঙ্গে।
পাশ থেকেই এক যাত্রী বলেন, মূল্যতালিকা আছে। তা কেউ মানে না। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা দরকার। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ট্রেনের খাবার গাড়ির কর্মী সাইফুল।
উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এগুলো হচ্ছে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী ও মহানগর গোধূলী এবং চট্টলা এক্সপ্রেস। এর মধ্যে সোনার বাংলা সকাল পৌনে ৭টা, সুবর্ণ পৌনে ৪টা, প্রভাতী সকাল ৭টা, গোধূলী ৩টা, চট্টলা এবং তূর্ণা সাড়ে এগারোটায় চলাচল করে।
আর প্রতিরাতে চলাচল করে লোকাল ট্রেন চট্টগ্রাম মেইল।
তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, প্রতিদিনই পর্যটকরা চট্টগ্রাম কিংবা পাবর্ত্য চট্টগ্রামে যান। কেউ আবার কক্সবাজারেও যান। এরমধ্যে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক আছে। তবে দেশি পর্যটকের সংখ্যাই বেশি যান ট্রেনে। “নিরাপদ হওয়ায় অনেকেই ট্রেনকেই বেছে নেন। তবে মাঝে মাঝে শিডিউলের একটু হেরফের হয়”
বুধবার রাতে তূর্ণায় সতেরটি বগি রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কেবিন বগিসহ এসি বগির সংখ্যা ছয়টি। বাকিগুলো নন এসি শোভন শ্রেণীর। যাত্রীদের জন্যে রয়েছে দু’টি খাবার গাড়ি। তবে খাবার বলতে শুধু পাউরুটি, কাটলেট আর বার্গারই ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৬
আরআই