ইউএস বাংলায় ভ্রমণ শেষে: প্ল্যাটফর্মের মাটি কামড়ে ল্যান্ডিং পজিশনে যাওয়ার সময় ইউএস বাংলার অত্যাধুনিক এয়ারক্র্যাফ্টের জানালার কাচ ভেদ করে চোখ আটকে গেল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফুলের বাগানে। রঙ্গন, কাঠমালতী ও নয়নতারা ফুলের প্রভাতি সমারোহ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলায় আনন্দ ভ্রমণের প্রথম ক্ষণটি যেন রাঙিয়ে দিল।
সাড়ে ৭টা মানে সাড়ে ৭টা। এক মিনিট এদিক সেদিক নয়- এই সূত্র মেনেই গত দুই বছরে যাত্রী পরিবহনে দেশের আকাশ পথ শাসন করছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স।
সুতরাং মেঘের ভেলায় পাখা মেলার আগে পূর্ব নির্ধারিত ‘ফ্লাইট টাইম’ যথারীতি সকাল সাড়ে ৭ টা। মিনিট দশেক আগে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে ইউএস বাংলার দু’টি প্রাইভেটকার বাংলানিউজের ৮ কর্মীকে পরমযত্নে নামিয়ে দিয়ে গেছে প্লেনের সিঁড়িতে।
বাকি যাত্রীদেরও একে একে তুলে নেওয়া হয়েছে ইউএস বাংলা ‘মহাপতঙ্গের পেটে’। ৭৬ আসনের সবগুলোই পূর্ণ। এখন উড়াল দেওয়ার অপেক্ষায়।
উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে ল্যান্ডিং স্টেশনে যাওয়ার সময় জানলার ফাঁক গলে দৃষ্টি সীমায় হঠাৎ অনধিকার প্রবেশ ৪/৫ টি এয়ারক্র্যাফ্টের। এগুলোর জরাগ্রস্ত শরীরে লাগানো লোগো জানান দিচ্ছে এরা অধুনা বিলুপ্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্লেন। যারা কেবল যাত্রীদের যন্ত্রণাই দিত, ভ্রমণান্দ নয়।
প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার গতিতে মিনিট খানেক ল্যান্ডিং স্টেশনে দৌড়ানোর পর প্লেন আকাশে মাথা তুললো। এরইমধ্যে কেবিনক্রু কবির হোসেন সাবলীল দক্ষতায় সাংকেতিক ভাষায় নিরাপত্তা নির্দেশিকা বুঝিয়ে দিলেন। এবার শুধু উড়ার পালা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেনটি মেঘের ভেলায় ভাসতে ভাসতে নির্ধারিত গন্তব্যে এগোতে লাগলো। মেঘের রাজ্যকে অনেক নিচে ঠেলে দিয়ে ২০ হাজার ফুট উপরে শরীরটাকে ভাসিয়ে ছুটে চলছে প্লেন। পেছনে পড়ছে একের পর এক মেঘের পাহাড়।
এরইমধ্যে কেবিন ক্রু নাইমি তার স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে হাজির। সঙ্গে সকালের নাস্তা-অমলেট, ভেজিটেবল রোল, সস, উটিএইচ স্ট্রবেরি জ্যুস, ড্রিকিং ওয়াটার!
যাত্রীদের ভাষ্যমতে বাংলাদেশের অভন্তরীণ ফ্লাইটে ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের এই ফুল প্যাকেজ নাস্তা রীতিমতো ফুলপেট লাঞ্চের সমান!
রেগুলার ইকোনোমি ক্লাসের যাত্রী ব্যারিস্টার পারভেজ হাসানের অভিব্যক্তিটা এ রকম- একটু আয়েসি ভ্রমণ ও বাড়তি যত্ন-আত্মির জন্য সড়ক পথের চেয়ে ৭/৮ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে মানুষ আকাশ পথে ভ্রমণ করে। কিন্তু ইতোপূর্বে আসা অন্য এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের সেই কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ দিক থেকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেবার গুণেই তারা টিকে যাবে বলে বিশ্বাস।
চল্লিশ মিনিটের আকাশ পথ। ভ্রমণটা যেহেতু সবচেয়ে আরামদায়ক এয়ারলাইন্সে সেহেতু সময় যে কখন ফুরিয়ে গেল- বোঝা গেল না। কেবিনক্রু নাইমি ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি মাখিয়ে জানিয়ে দিলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমরা অবতরণ করব।
ঘোষণার সাথে সাথে শরীরে মেঘের আচড় কেটে প্লেনটি তার পেটের বাম অংশ নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে ঘুরপাক খেতে লাগলো। জানালা দিয়ে দেখা কর্ণফুলি ব্রিজটিকে মনে হলো ছোটবেলায় পাটশোলা দিয়ে বানানো খেলনা সাঁকো। আর বড় বড় ভেসেলগুলোকে মনে হলো কলার মোচা দিয়ে তৈরি খেলনা ডিঙ্গি!
কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলো ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের সকাল ৮টা ২০ মিনিটের ফ্লাইটটি। দুই দিন আগে হাতে পাওয়া টিকিটে এরাইভ্যাল টাইম এটা-ই লেখা ছিল।
যাত্রা শুরুর আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত ইউএস বাংলার শিফ্ট ইনচার্জ সাদিয়া আফরিন জানিয়েছিলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন গড়ে ১৩/১৪ ফ্লাইট পরিচালিত হয়। প্রতিটা ফ্লাইট যথাসময়ে উড়াল দেয়। আসনও থাকে শতভাগ পূর্ণ।
ধরে নিলাম, কোনো দুর্বিপাক ছাড়া ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের সময় হেরফের হবে না!
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৬
এজেড/এমজেএফ