খাগড়াছড়ি থেকে: শোরুমে বিচিত্র রঙের চোখ ধাঁধানো কাপড়গুলো সহজেই নজর কাড়ছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা স্থানীয় স্মারক হিসেবে সংগ্রহ করছেন কোমর তাঁতে বোনা ঐতিহ্যবাহী এসব পণ্য।
খাগড়াছড়ি শহরের আদালত সড়ক মানেই তাঁতের রাজ্য। এখানে বয়ন টেক্সটাইল, অর্ণব ক্রাফটস, নিউ আড়ং, পাহাড়িকা, রাঙামাটি, রেইন, পাহাড় ফ্যাশনের সারি সারি দোকান।
এছাড়াও মাস্টারপাড়া সড়কের বনশ্রী, নারকেলবাগান এলাকার হক মার্কেটের বনানী, রাঙাবী ক্রাফটসেও কোমর তাঁতে তৈরি পণ্যের ছড়াছড়ি। পাশাপাশি রাঙামাটির বিশেষায়িত টেক্সটাইল ও রকমারি বার্মিজ সামগ্রীর জমজমাট বিকিকিনি চলে পর্যটন মৌসুমে।
পাহাড়িকা ক্রাফটসের বিক্রয়কর্মী অর্চনা বড়ুয়া জানালেন, কোমর তাঁতে তিন ধরনের শাল হয়। মোটা শাল ৪৫০ টাকা, পাতলা ৩০০ টাকা ও লম্বা শাল ৫৫০ টাকা বিক্রি হয়। এছাড়া মাফলার ১৫০-২৫০ টাকা দরে মেলে। বর্ণিল রং, সাদামাটা কিন্তু অপূর্ব নকশার কারণে এসব পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলেই জানালেন অর্চনা।
ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আনজুমান আরা নারকেল বাগান এলাকার হক মার্কেটে রাঙাবী টেক্সটাইলে কেনাকাটা করছিলেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, খাগড়াছড়ির কোমর তাঁত একটি ঐতিহ্যবাহী পণ্য। এটি টিকিয়ে রাখতে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। তাহলে ক্রমেই সমৃদ্ধ হবে।
যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্রেই একই ধরনের পণ্যসামগ্রীর বেচাকেনা করতে দেখা যায়, যা অনুচিত মত দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মনে করেন, প্রতিটি এলাকায় নিজস্বতা থাকবে। সেটা হলে পর্যটকরা আরও বেশি করে েএসব পণ্য কিনবে।
অর্ণবের উদ্যোক্তা অসীম কুমার দে (৩৫) ক্রাফটসের দোকানে কাজ করেছেন ছয় বছর। নিজে শোরুম দিয়েছেন আড়াই বছর হলো। তিনি দেখালেন আদিবাসী মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক থামি। দুটি অংশ মিলে এক সেট। চাকমা ভাষায় পিনন (নিচের অংশ), খাদি (উপরের অংশ)। সূতির এক সেট থামি ৪০০-৪৫০ টাকা, রেয়নের থামি সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
নিউ আড়ংয়ের রাসেল পাল জানান, পর্যটক ছাড়াও কর্মসূত্রে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন, তারা পাহাড়ি নারীদের তৈরি শাল, মাফলার, গামছা, বিছানার চাদর, হাতব্যাগ, শোপিস ইত্যাদি কিনে নিচ্ছেন। এতে এখানে বাজারটা জমজমাট থাকে।
রাউজানের পাহাড়তলি মহামুনি এলাকার গৃহিণী ময়না বড়ুয়া আদালত সড়কে হিল ফ্যাশন নামের শোরুম খুলেছেন ২০০০ সালে। দিন দিন পর্যটক বাড়তে থাকায় বেচাকেনা, সরবরাহ ও শোরুমের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানালেন তিনি।
বিকিরণ রোয়াজার (৩০) পাহাড় ফ্যাশনে বাড়তি আকর্ষণ হচ্ছে কুমিল্লার খাদি পণ্য। ৫০০-৬০০ টাকায় বিছানার চাদর, ৬০০ টাকায় থ্রিপিস, ৫০০ টাকায় পাঞ্জাবি, ৩৫০ টাকায় খাদি কাপড়ের হাফশার্ট বিক্রি করেন তিনি।
কোমর তাঁতের পণ্যের বাইরে এসব শোরুমে রাঙামাটি টেক্সটাইলের থ্রিপিস কাপড় ৫০০-১২০০ টাকা, সূতির পিনন শাড়ি দেড় হাজার টাকা, হাফ সিল্ক শাড়ি দুই-আড়াই হাজার টাকা, পার্স ব্যাগ ১০০-৪০০ টাকা, গামছা ৭০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়।
মেয়েদের অাকর্ষণীয় বার্মিজ প্রসাধনী মুলতানি মাটি ২০-৩০ টাকা, চন্দন ক্রিম ৬০-৭০ টাকা, লন্ডন সাবান ১০ টাকা, প্যারিস সাবান ২০ টাকা, হারমনি সাবান ৩৫ টাকা, চন্দন সাবান ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়। রয়েছে ৭০ টাকা দামের পেইন কিলার বামও।
বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: পাহাড়ে বাংলানিউজ
বাংলাদেশ সময়: ০১১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬,
এআর/এমএমকে