খাগড়াছড়ি থেকে: তেঁতুলের কচি পাতা দিয়ে মুরগির স্যুপ, ফাল্গুনের কচি লালাভ আমপাতা ভর্তা কিংবা কাঁচা কচি আস্ত কলাগাছের ভর্তা! কোনো আজগুবি গল্প নয়, এগুলো সত্যি খাবার। আর মজাদার এসব অদ্ভুত পাহাড়ি খাবার পেতে জুড়ি নেই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির সমতল শহরের ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট সিস্টেমের।
খাবারের বৈচিত্র্যে অন্য দুই পার্বত্য জেলা থেকে খাগড়াছড়ি যে আলাদা তার প্রমাণ মিলবে মং মারমার নিজ হাতে গড়া এ রেস্টুরেন্টে। পর্যটনের অপার সম্ভাবনার এ জেলায় এসে সিস্টেমে বাঁশ থেকে হাঁস খাননি- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। জনা পঞ্চাশেক ভোজনরসিকের ধারণক্ষমতার এ রেস্টুরেন্টে সবচেয়ে বেশি ভিড় জমান সাজেকগামী পর্যটকরা। এখানে খেতে হলে রীতিমতো আগে থেকে বুকিং দিয়ে খেতে হয়।
পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী, মজাদার সব খাবার তৈরি করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি পাওয়া সিস্টেমে দেশের বড় বড় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সেলিব্রেটিরা খেয়েছেন এবং এলেই খান বলেও দাবি রেস্টুরেন্টটির স্বত্বাধিকারী মংয়ের।
এখনকার সফল এ ব্যবসায়ী মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, মানুষকে খাওয়ালে কমে না। বলতে বলতে ফিরে যান এক যুগ আগে। জানান, একটি টেবিল পেতে এক যুগ আগে রাস্তার পাশে বসে চা বেচতেন তিনি। সেখানে বিপদে পড়ে কখনো সখনো কেউ ভাত খেতে চাইতেন। এসে বলতেন, ‘দাদা একটু দেখেন না, সিস্টেম করে দেওয়া যায় কি-না’। একবার দিলে পরে এসে আবার কেউ হয়তো বলতেন, ‘দাদা সেবারের মতো একটু সিস্টেম করে দেন না’।
এভাবে বাড়তে থাকে দুই, চার, ছয়জনের পরিসর। তারপর ২০১০ সালে নিজ বাড়ির সামনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট সিস্টেম।
ঘরোয়া পাহাড়ি পরিবেশে খাবার পরিবেশনের চেষ্টা করেন এখানে কর্মরত ২০ জন পরিবারের মানুষ। কোনো আলাদা কর্মচারী না থাকায় কারও আন্তরিকতার একটুও ঘাটতি নেই।
কচি বাঁশের নানা পদের খাবারে সিস্টেমের রয়েছে আলাদা পরিচিতি। বাঁশ ভাজি, বাঁশ ডাল তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ ব্যাম্বু চিকেন। এছাড়া রয়েছে কলার মোচা ভর্তা, কাঁচা হলুদ ভর্তা, ছোট মাছ দিয়ে হলুদ ফুলের সবজি, কলাপাতা মোড়ানো ছোট মাছ, কলমি ভর্তা, থানকুনি পাতা ভর্তা, মজাদার ডিম মাশরুম, বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি সিদ্ধ সবজি, চিকেন গুরদানি, পাহাড়ি হাঁসের মাংসের কালাভুনা, কাঁচকি ফ্রাই ও ভর্তাসহ বিভিন্ন মজাদার সুস্বাদু পদ। মৌসুমভেদে আরও কিছু পদও তৈরি হয় এখানে।
সদালাপি ও সদাহাস্য মং ব্যস্ততায় বিলের কাগজে মুখ ডুবিয়ে বলেন, ‘মানুষকে খাইয়ে সব সময় খুশি করতে চাই। কেউ খেতে এলে আমি ফেরাই না। সব সময় চেষ্টা থাকে, যা আছে তা দিয়ে খাওয়ানো। টাকা না থাকলেও অনেক সময় খাওয়াই। মানুষকে খাওয়ালে কমে না’।
রেস্টুরেন্টটির ডেকোরেশনে ব্যবহার করা হয়েছে পাহাড়ি ঐতিহ্য বহন করা সব জিনিস। জুম থেকে শুরু করে বিভিন্ন দ্রব্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জিনিস রয়েছে তালিকায়। নিভু নিভু আলোয় সে সজ্জা দেয় ভিন্ন আমেজ।
এখন পর্যটন মৌসুম। তাই প্রতিদিন এখানে দুপুর ও রাত মিলিয়ে খেতে আসেন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচশ’ মানুষ। খাবারে মেন্যু ও স্বাদে ভিন্নতা থাকলেও দাম একটু বেশি বলেই দাবি পর্যটকদের। তবে ঘুরতে বের হয়ে কেউ পয়সার দিকে তাকান না বলেও জানান। ভিন্ন স্বাদের খাবার খেয়েই খুশি তারা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিব বলছিলেন, ‘বন্ধুদের নিয়ে সাজেক থেকে ফিরে রাতে খেতে এসেছি। সিস্টেমের নাম অনেক শুনেছি। দাম একটু বেশি হলেও খেয়ে ভালো লাগলো’।
ও, হ্যাঁ, খাবার শেষে অসাধারণ স্বাদের তেঁতুলের জুস আর বাইরে রাখা আমলকি মুখে দিয়ে ফিরতে ভুলবেন না কিন্তু!
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এএ/এএসআর