খাগড়াছড়ি থেকে: বাঁশের ছোট্ট শলাকা। তার মাথায় পাতলা সুতির কাপড় পেঁচানো।
এটি খাগড়াছড়ি শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ধর্মপুর আর্য বনবিহারের চিত্র। প্রতিবছর প্রবারণা পূর্ণিমাকে সামনে রেখে ‘৮৪ হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন’ করা হয়। এ উপলক্ষে বসেছে রকমারি পণ্যের মেলাও।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) ভোর থেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন নানা বৌদ্ধ দায়ক-দায়িকারা (নারী-পুরুষ)।
বিহারের অধ্যক্ষ ভদ্দজী ভান্তে বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন মন্দিরে হাজার বাতি জ্বালানোর রেওয়াজ আছে। আমাদের এখানে বিশেষভাবে তৈরি বাতি গুচ্ছ গুচ্ছ করে কলাগাছে লাগিয়ে বিশেষ কৌশলে জ্বালানো হয়। দায়ক-দায়িকার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে বাতিদানের বিষয়টি। কেউ হাজারটা বাতি দান করে, কেউ ১০ টাকায় ১০টি। তবে ৮৪ হাজারের কম হয় না। একটি বাতি ১০ মিনিট জ্বলে।
দৃষ্টিনন্দন বিহারের বিশাল শামিয়ানায় ঢোকার আগেই বাতি জমা নিচ্ছিলেন বৌদ্ধ ছাত্রছাত্রী ও যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস চাকমা।
তিনি বলেন, সন্ধ্যার আগে আশা করি আড়াই লাখ বাতি জমা পড়বে। পাহাড়চূড়ার বিহার চত্বরে দুপুর পর্যন্ত যে দেড় লাখের বেশি বাতি জমা পড়েছিল তা কলাগাছে গাঁথা হয়েছে। বাকিগুলো প্রধান সড়ক থেকে বিহারে আসার পথের দু’পাশে কলাগাছে গাঁথা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সড়কটি ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী বর্ণিল পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে।
মূল ফটকের আগে যে মেলা সেখানে বেশির ভাগ দোকানেই বিক্রি হচ্ছে বাতিগুলো। কেউ ফেরিও করছেন। তাদেরই একজন উত্তম দেওয়ান। তিনি বলেন, এটি পবিত্রতার পথিক। বছরের এ দিনটিতে প্রচুর লোকসমাগম হয়। ৮৪ হাজার বাতি বলা হলেও লাখ লাখ বাতি জ্বলে। যতই দিন যাচ্ছে লোকসমাগম শুধু বাড়ছে।
তিনি জানান, বিকেলে আলোচনা সভা হবে, প্রার্থনা হবে। এরপর প্রথমে বড় ভান্তে বাতি জ্বালাবেন। এটি মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর হাজারো মানুষ বাতি জ্বালাবেন। আলোয় আলোয় ধুয়ে যাবে পাপ, অশান্তি।
এ প্রসঙ্গে মিঠুন চাকমা বলেন, ৮৪ হাজার বাতি জ্বালানো ছাড়াও আজ ওড়ানো হবে তিন ডজন ফানুশ। ইতিমধ্যে ফানুশ তৈরি ও শুকানোর কাজ হয়ে গেছে।
স্থানীয় মধুপুর থেকে দুপুরেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলে আসেন বয়স সেন চাকমা (৫৫)। তিনি বলেন, মানত ছিল তাই বাতি দিতে এসেছি। প্রতিবছরই আসি। দূরের স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয়। খোঁজখবর নেই। বলতে পারেন মিলনমেলা।
** কোমর তাঁতে মুগ্ধ পর্যটক
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬,
এআর/এমজেএফ/