মধ্য বোয়ালখালী (দীঘিনালা) ঘুরে: গাছে ঝুলছে সবুজ মাল্টা, পাশের উঁচু গাছটাও গোল গোল কমলা লেবুর ভারে যেন নুয়ে পড়ছে। আর একটু দূরে পাহাড়ে সারি সারি গাছে ধরেছে আনারস।
শুধু কি এ দু’তিনটিতেই সীমাবদ্ধ? দেশীয় প্রজাতির আম, জাম, কাঁঠাল, কমলা, বাতাবি লেবু যেমন রয়েছে তেমনি আছে থাই পেয়ারা, ড্রাগন ফল, আপেল আঙুর কিংবা কাটা মেহেদীর গাছও।
দেশি-বিদেশি আরও অসংখ্য গাছের পাশাপাশি দীঘিনালার বসু ফ্রুটস ভ্যালিতে রয়েছে অনেক বনজ-ওষুধি গাছও।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় আধঘণ্টার পাহাড়ি পথ, দীঘিনালা উপজেলার ভেতর বোয়ালখালীর পশ্চিম পাড়ায় এ ফ্রুটস ভ্যালির অবস্থান।
২০০৪ সালে পাহাড়ে ৫ একর জায়গা নিয়ে ছোট্ট পরিসরে ‘বসু ফ্রুটস ভ্যালি’র কাজ শুরু করেন এর সত্ত্বাধিকারী স্থানীয় কৃষক তরুণ কান্তি বসু।
প্রথমে ছোট পরিসরে হলেও পরবর্তীতে বড় করতে করতে এখন ২২. ৫০ একরে দাঁড় করিয়েছেন। সফলতাও পেয়েছেন বেশ। নানা-প্রজাতির ওষুধি, ফলদ-বনজ গাছ দেখতে দেশি-বিদেশি পযর্টক ছুটে আসেন ফ্রুটস ভ্যালিতে। কেউ কেউ আবার তাজা ফল কিনেও নিয়ে যান।
ফ্রুটস ভ্যালির তত্ত্বাবধায়ক জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এখানে বর্তমানে প্রায় ১৮০ প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের ফল গাছের পাশাপাশি রয়েছে বনজ ও ফুল গাছ।
ভ্যালি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই নিজে এখানে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম খুব একটা লাভ দেখা যায়নি। তবে এখন এখানে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায়। কয়েকদিন আগে পেয়ারা শেষ হয়েছে। এখন মাল্টা আর পেঁপের সংগ্রহ চলছে। কিছুদিন পর কমলা তোলা হবে।
জসিম জানান, ফ্রুটস ভ্যালিতে ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। যেটি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটউট উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া বাগানে অত্যন্ত দুর্লভ প্রজাতির রামবুটাম, কনকর্ড লেবু, থাই লেবু পাওয়া যায়। যা পাবর্ত্য এলাকার অন্য কোথাও মেলে না।
‘ফরমালিন মুক্ত এসব ফল কিনতে পাহাড়ে বসবাসকারী বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এখানে আসে। বারি মাল্টা ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে আর ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬০০ টাকা দরে, জানান জসিম।
অর্থনীতি ও বনায়নে অবদান রাখায় ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছে ‘বসু ফ্রুটস ভ্যালি’।
এদিকে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়িতে আসা অনেক পর্যটকই ঘুরে যান ফ্রুটস ভ্যালি। পরিকল্পিত এ বাগান এরই মধ্যে অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হয়ে গেছে।
অনেকে মুগ্ধ হয়ে ফের এখানে আসার ইচ্ছে পোষণ করেছেন মনে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির পর্যটক মৈত্রেয়ী বসু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ঘুরে যান ফ্রুটস ভ্যালি। পরিদর্শন বইয়ে তিনি লিখেছেন, অনেক বিরল প্রজাতির গাছের এ অপরূপ সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সুযোগ পেলেই চলে আসবো এখানে।
পাহাড়ের রুক্ষতার মধ্যে সবুজের সমারোহ দেখে মুগ্ধ ঢাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফী জাহান। তিনি বলেন, অনেক কিছু নতুন দেখলাম এখানে, ফ্রুটস ভ্যালি আমার বহুদিনের শখ আপেল ও চন্দন গাছ দেখার সুযোগ দিয়েছে। ২০১১ সালে মার্চে ভ্যালিতে এসে পরিদর্শন বইয়ে লিখে গেছেন আশরাফ।
এদিকে ফ্রুটস ভ্যালির আয় প্রসঙ্গে জসিম বলেন, প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ আম-লিচুসহ ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে আয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ হবে হয়।
রাঙামাটি পাবর্ত্য অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক হরিপদ মজুমদার বলেন, এটা ব্যক্তি উদ্যোগের একটি বাগান হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
‘তার দেখাদেখি অন্যরাও ছোট ছোট বাগানে আগ্রহী হয়ে ওঠবেন,’ বলে মনে করেন তিনি।
** খাবারের দামটাই যা বেশি তূর্ণা নিশিথায়
** পাহাড় থেকে বাজারে নেমে গেছে ‘ভাগের মা’ সড়কটি
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এমএ/এমজেএফ/