খাগড়াছড়ি থেকে: মং দা’র আতিথেয়তায় এদিন নতুন মাত্রা এনে দিলো নতুন একটি খাবার। অন্তত বাংলানিউজ টিমের সবার জন্য।
নতুন আবিষ্কারের উত্তেজনায় খুব সন্তর্পণে দেখতে থাকলাম বাঁশের ভেতরে রান্না মুরগির মাংস বের করার প্রক্রিয়া। বাঁশটির দুই গিঁটের মাঝের ফাঁকটি বেশ লম্বা। কাটামুখ আটকানো ছিলো পাতা দিয়ে। খুলতেই ধোঁয়া ওঠা ভাপ! সঙ্গে মন মাতানো ঘ্রাণ। তারপর আস্তে আস্তে একটু একটু করে ধাক্কায় বেরিয়ে এলো ১৬ জনের জন্য তৈরি করা সুস্বাদু ব্যাম্বো চিকেন।
পাতে পরিবেশন করতেই এলো নানান মন্তব্য। অবশ্য মন্দ নয়। মাংস সুস্বাদু তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একটু কাঁচা বাঁশ আর মিন্টের মতো গন্ধ শুধু। তাতেই হাত ডুবিয়ে পেটপুরে খাওয়া।
বাঁশের ভেতর বিভিন্ন পদের তরকারি ও ভাত রান্না পাহাড়ের পুরনো কালচার। এক সময়ের বাঁশ নির্ভর রান্নার জায়গা দখল করেছে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি। তবে শহুরে পরিবেশেও মজাদার ও ঐতিহ্যবাহী এ খাবারটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে খাগড়াছড়ির শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বৈচিত্র্যে ভরপুর রেস্টুরেন্ট সিস্টেম। মং মারমা এর স্বত্বাধিকারী।
মং বলেন, ছোটবেলায় আমরা বলতাম হুক্কার রান্না। বাঁশের চোঙার মধ্যে রান্না হতো। ওই একই ধরনের চোঙা হুক্কা টানা হয়। তখন অবশ্য ভাত, মাছ সবই রান্না হতো। মসলা দেওয়া হতো খুবই কম। এখন একটু বৈচিত্র্য আনা হয়েছে যেন সবাই খেতে পারে আবার খাবারটিও বেঁচে থাকে।
উপকরণ বাঁশ সম্পর্কে তিনি বলছিলেন, বিভিন্ন ধরনের বাঁশের মধ্যে চিকেন রান্না করা যায়। ডলু বাঁশ, ফারোয়া বাঁশ, মিটিঙ্গা বাঁশের চোঙায় রান্না হয়। খেয়াল রাখতে হবে বাঁশ অবশ্যই কাঁচা হতে হবে। এতে পানি বেশি থাকায় রান্নায় সুবিধা হয়। পোড়ে না সহজে।
রন্ধন প্রণালী সম্পর্কে মং বলেন, মসলা প্রায় সবই দিতে হয়। মাংসে মসলা আগে থেকে মাখিয়ে রাখতে হয়। মাংসগুলো কাটতে হয় ছোট করে। এতে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। তারপর বাঁশের চোঙায় ঢুকিয়ে কাঁচা কলাপাতা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় মুখ। পরে কয়লার উপর হালকা আঁচে হয় রান্না।
রান্নার জন্য সময় খুব বেশি লাগে না। তবে একজন মানুষ সারাক্ষণ খেয়াল রাখা লাগে। বারবার উল্টে দিতে হয় যেন বাঁশটি পুড়ে না যায়। এভাবে উল্টে পাল্টে আধাঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের মধ্যে পুরোপুরি রান্না হয়ে যায়। বলছিলেন এ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী।
তিনি জানান, একটি বাঁশের গিরা কিনতে হয় ১০ থেকে ১৫ টাকায়। মসলা সবই লাগে। বিশেষ কিছু মনে হলো বলতে চাইলেন না। চার-পাঁচজনের জন্য যে পরিমাণ মাংস রান্না করা হয় তার দাম পড়ে ৫শ টাকার মতো।
আগুনের আঁচে একটানা দাঁড়িয়ে কষ্ট ও ঝামেলা সহ্য করে রান্না করতে হয় বলে সব সময় অর্ডারও নেন না মং। বিশেষ ক্ষেত্রেই শুধু তৈরি করেন। দূর থেকে কেউ খাগড়াছড়ি এসে আবদার করলে সহজে ফিরিয়ে দেন না সদাহাস্য মং। সুতরাং একবার ঢুঁ মারতেই পারেন সিস্টেমে!
** পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এএ/আরআই