ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খাগড়াছড়ি থেকে: ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ মজাদার ফল মাল্টা খেতে এখন আর চেয়ে থাকতে হয় না ফরমালিন ভরা ভিনদেশি হলুদ মাল্টার দিকে। পাহাড়ের দেশি সবুজ মাল্টা (বারি-১) রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।

সমতলেও এখন দেদারছে ফলছে মাল্টা। আর একাজটি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির একদল বিজ্ঞানী।
 
খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও খামারে ঢুকতে বাঁপাশে চোখ যেতেই মন জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ের ঢালে গাছগুলো নুয়ে আছে সবুজ মাল্টায়। ঝোপালো গাছে থোকায় থোকায় ফল। পর্যটন মৌসুমে পাহাড়ি এ জেলায় বেড়াতে আসা দর্শনাথীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ এ মাল্টা বাগান।
 
গত পাঁচ বছরের বাণিজ্যিকভাবে সবুজ মাল্টা চাষ বেড়েছে ব্যাপকহারে। কারণ পাহাড়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমতলের মাটিতে উৎপাদনের জাত উদ্ভাবন করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। দীঘ গবেষণার পর ২০১১ সালে খাগড়াছড়ি সদর, রামগড় ও রাঙামাটির রাইখালির তিন স্টেশনে গবেষণার পর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলে সবুজ মাল্টা উৎপাদনের জাতটির অনুমোদন দেয়। সেই থেকে বাড়ছে দেশজুড়ে সবুজ মাল্টার চাষ।
 
জানাচ্ছিলেন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম রহমান। তবে এ সফলতার কৃতিত্ব কারও নামে দিতে চাইলেন না। বললেন, এ সফলতা প্রতিষ্ঠানের।
 
দেশে সবুজ মাল্টা বিপ্লবের নানান দিক নিয়ে কথা হচ্ছিলো এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, পাহাড়ি মাটিতে বারি-১ মাল্টা ভালো হয়। তবে দেশের যেকোনো অ্যাসিডিক মাটিতেই এটি ভালো ফলন দেয়। অন্য মাটিতেও হয়, তবে ফলন হয়তো তুলনামূলক একটু কম হয়। সিজনে গাছপ্রতি ন্যূনতম ২৫০-৩০০ পর্যন্ত ফল ধরে।
 
কলম ও ফল ধরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চারাগুলো সাধারণত গ্রাফটিং করা হয়। প্রথম তিন বছর ফল ধরলেও সেগুলো রাখা হয় না। এরপর গাছ একটু বড় হলে ফল রাখা শুরু হয়। গাছ ছাঁটা হয় নিয়মিত। ফুল আসার আগে কাটা হয় শুকনো ডালপালা। ঝোপালো গাছেই ফল ধরে বেশি। এছাড়া সার ও গাছের চারপাশে খড় দেওয়া হয় আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য।
 
চলতি বছরে এখন পযন্ত ১২ হাজার চারা এখান থেকে বিতরণ ও বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। চারার দাম এখানে রাখা হয় মাত্র ৫০ টাকা। তবে বাইরে যে চারা পাওয়া যায় সেগুলোর দাম যে যা পারে সেটা বলেই জানা যায় তার ভাষ্যে।

সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ফুল আসে। আর ফল সংগ্রহের মৌসুম অক্টোবরের প্রথম পর্যন্ত।
 
এই মাল্টা গাছ বাঁচে ১৫ থেকে ২০ বছর। ভালো ফলনের জন্য সারা বছর পরিচযা জরুরি বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। কথা বলতে বলতে বাগানের টাটকা মাল্টা কেটে খাওয়ালেন তিনি। স্বাদে যেমন স্বতন্ত্রতা রয়েছে, তেমন মিষ্টিও। সে তুলনায় বরং বিদেশি মাল্টাই টক।
 
২৩০ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এ পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের আরও সফলতা রয়েছে। কাজু বাদাম, লিচু, কমলা, চায়নিজ কমলা, বেরিকেডেট মাল্টা, ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন ফল নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। চায়নিজ কমলা, কাজু বাদাম ও বেরিকেডেট মাল্টা নিয়ে গবেষণা এগিয়ে বেশ।
 
বিভিন্ন ধরনের ফল ও গাছগাছালি দেখতে এখানে ভিড় জমান দশনাথীরা। তবে ঢোকায় রয়েছে বিধি-নিষেধ। তবে অনুমতি নিয়ে ঢোকা যায়। পাহাড়ি বন্য পরিবেশে বিচিত্র সব ফল-ফলাদি দেখা এবং সময় কাটানোর জন্য লেকের ওপর ঘরও রয়েছে এখানে।
 
গবেষণায় এগিয়ে গেলেও এখানকার কমকতারা নানান ধরনের সমস্যায় রয়েছেন বলেই জানালেন গোলাম রহমান। পরিবার সন্তান নিয়ে থাকা, পড়াশোনা প্রভৃতি বিষয়ে সরকার আরও বেশি নজর দিলে নতুন সব উদ্ভাবন দেশকে অনেক এগিয়ে দেবে বলেই মনে করেন তিনি।
 
** পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
** বাঁশের ভেতর মুরগি, পদের নাম ব্যাম্বো চিকেন

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ