খাগড়াছড়ি থেকে: দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির বলতে অনেকে বোঝেন রামুর বৌদ্ধ মন্দিরকে। আসলে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার উল্টোছড়ার বৌদ্ধ মন্দিরটিই বাংলাদেশের বৃহত্তম ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম।
জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের এ বৌদ্ধ মন্দির ‘শান্তিপুর অরণ্য কুটির’ নামে পরিচিত।
মন্দিরের বর্তমান বড় ভান্তে শাসন রক্ষিত মহাস্থবির শান্তিপুর এলাকায় এ অরণ্য কুটির গড়ে তোলেন। তিনি সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ৮ম শিষ্য। সাধনা নন্দ ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পরলোকগমন করেন।
দম্মা-ধায়াদা ঐক্য পরিষদের (ডিওপি) সভাপতি সঞ্জয় চাকমা জানান, শান্তিপুরের গহীন বনে ধ্যান করছিলেন শাসন রক্ষিত। দিনের পর দিন এভাবে খোলা জায়গায় ধ্যান করতে দেখে প্রথমে একটি ছোট ঘর তৈরি করে দেন স্থানীয়রা। এরপর শাসন রক্ষিতের প্রাণান্তকর চেষ্টায় বর্তমান শান্তিপুর অরণ্য কুটির হয়েছে।
পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি তীর্থস্থান।
১৯৯৯ সালে নির্মিত ৫০ ফুট উচ্চতার এ বুদ্ধ মূর্তি তৈরিতে সময় লেগেছে ৩-৪ বছর।
পর্যটকদের মূল আকর্ষণও এই গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। সেটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আরও বিভিন্ন ছোট ছোট কুটির। পাশে আছে সুজাতার মূর্তি, যে নারী পায়েশ খাইয়ে বুদ্ধের ধ্যান ভঙ্গ করেছিলেন।
প্রতি বছর বৌদ্ধ পূর্ণিমা, আষাঢ়ি ও প্রবারণা পূর্ণিমাতে এখানে বুদ্ধপূজা বা উৎসব হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। এ উৎসবে এখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ভক্ত-পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে। একই দিনে বিভিন্ন ধাপ শেষ করে তুলা থেকে কাপড় বোনার কাজে অংশ নেন পাহাড়ি এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ।
প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পর্যটকরা এখানে পরিদর্শন করতে পারবেন। আগামী ৫ ও ৬ নভেম্বর এখানে সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হবে।
কুঠিরের মূল গেটের আগে ভেন ঘরে প্রবারণা পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দানসহ ভান্তেদের বিভিন্ন ধরনের দান অনুষ্ঠান হয়।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) ছিল এ কুটিরের ভান্তেদের বর্ষাবাসের শেষ দিন। তিন মাস বর্ষাবাসের সময় সাধনা কুটির ছাড়া অন্য কোথাও রাতযাপন করেন না তারা।
কুটিরে আছে চিকিৎসালয়, পাঠাগার, ভিআইপি বিশ্রামাগার, অফিসকক্ষ, পূণ্যার্থীদের বিশ্রামাগার এবং কনফেকশনারি দোকান।
ইট বিছানো পথের ডান পাশে সুবিশাল মাঠ। মাঠের পূর্বপাশে তৈরি হচ্ছে অনুষ্ঠান মঞ্চ এবং উত্তর পাশে রয়েছে ছোট্ট একটি বেড়ার ঘর। কথিত আছে, রাধামন ধনপতি নামে একজন বুদ্ধ ভক্ত তুলা সংগ্রহের পর এ রকম একটি ঘরে বিশ্রাম নিতেন। এরপর ভেন ঘরে গিয়ে বুনন করতেন। সেই থেকে প্রতীকীভাবে এটা করা হয়। ছোট ঘরটিও ওই ভাবনা থেকে করা।
এখানকার বাতিঘরে ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের মন বাসনায় মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকেন। গৌতম বুদ্ধের সর্ববৃহৎ মূর্তির সামনে রয়েছে প্রার্থনার সুসজ্জিত স্থান। এর দু’পাশে আছে সিবলী মন্দির ও উপগুপ্ত কাঠের মন্দির।
কুটিরের দক্ষিণ পাশে বড় ভান্তে শাসন রক্ষিত মহাস্থবিরের বাসভবন ও সাধনারত ভান্তেদের থাকার ঘর।
অনিমা চাকমার নামে উৎসর্গ করা একটি ঘরে চারদিকে মুখ করে রাখা হয়েছে গৌতম বুদ্ধ, সুঘলায়ন, চারিপুত্র এবং আনন্দ চাকমার মূর্তি।
সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তির পেছনের দিকটায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। কারণ, ভেতরের ১৩টি সাধনা কুটিরে নির্জনে বসে দিনের পর দিন সাধনা করেন ভান্তেরা। তাদের সাধনায় বিঘ্ন না ঘটাতেই প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
এখানে এসে পর্যটকরা প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি আগর গাছ, মেহগনি গাছ, রাবার গাছ, তেজপাতাসহ ৩৫ হাজার বনজ এবং ফলজ গাছ দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এসএইচ/এএসআর