রিছাং ঝরনা (খাগড়াছড়ি) ঘুরে: প্রায় ৪০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে ঝরনার জলরাশি, ঢালু পাহাড় গড়িয়ে এ জলরাশির প্রবাহ নিচে নেমে যাচ্ছে। শির শির শব্দে হিমশীতল স্বচ্ছ জলরাশি যে কাউকেই কাছে টানবে।
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পযর্টন কেন্দ্র পেরিয়ে সামান্য পশ্চিমে মূল সড়ক থেকে উত্তরে অবস্থান ‘রিছাং ঝরনার’। বছরের পুরো সময়েই জলের প্রবাহ একই থাকে এ ঝরনায়। তবে যে অংশ থেকে জলরাশি আছড়ে পড়ছে তা খানিক উপর থেকে যোগান দিচ্ছে ছোট ছোট দু’টি ধাপে নেমে আসা জলরাশি।
জানা যায়, মারমা ভাষায় ‘রি’ শব্দের অর্থ ‘পানি’ আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ ‘গড়িয়ে পড়া’। এই অর্থে রিছাং ঝরনা মারমাদের কাছে পরিচিত ‘তেরাং তৈকালাই’ ঝরনা হিসেবে।
ঝরনার সৌন্দর্য অবলোকন ও সাবির্ক বিষয় জানতে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে বাংলানিউজ হাজির হয় সেখানে। দূর থেকেই ঝরনার শির শির শব্দ আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছিলো। আর কাছে গিয়ে গা এলিয়ে দিতেই পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিলো স্বচ্ছ হিমশীতল জলরাশি।
এ সময় দেখা যায়, ঝরনার জলরাশির প্রবাহ যেখানে আছড়ে পড়ছে সে স্থানটি খানিকটা খাড়া হওয়ায় মূল ‘অ্যাডভেঞ্চার’ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন অনেকেই। নিচে জলরাশির প্রবাহ যেখানে মিলেছে সেখানে অবস্থান নিয়ে অনেকেই ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন’।
সন্তানসহ আসা এক দম্পতি তো প্রশ্নই ছুড়ে দিলেন, আপনারা কোন পথে ঝরনার কাছে গেলেন। তাদের কথায় ‘সাহস সঞ্চার’ করে ঝরনার দিকে পা বাড়ালেন দুই যুবক।
ঝরনার জলে অবগাহন শেষে ফিরতি পথে কথা হয় রাজধানীর সাভার থেকে আসা ৪৫ সদস্যের দলের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রিছাং ঝরনার কথা অনেক শুনে এবার গা জুড়াতে আসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৩৫ শিক্ষার্থীও এছেসেন রিছাংয়ের স্বচ্ছ জলে গা ভাসাতে। তবে তাদের কাউকেই ঝরনার কাছে দেখা গেলো না। হয়তো ভয় পেয়েই তারা ‘রিছাংয়ের রোমাঞ্চ’ থেকে বিরত থাকলেন!
ডলার ত্রিপুরা নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ২০০২ সালে ঝরনাটির প্রথম সন্ধান পাওয়া যায়। দিনদিন একে ঘিরে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। পুরো বছর পর্যটকের ভীড় থাকলেও বিশেষ বিশেষ সময়ে তা বেড়ে যায় কয়েকগুন।
রিছাং ঝরনায় ভিজতে চাইলে সঙ্গে অবশ্যই হালকা কাপড় নিতে হবে। আর পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায় নিজেকে প্রমাণ করতে হলে সঙ্গে নিতে হবে পানি, নইলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে পকেট কাটবেন।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে বাসযোগে সহজেই পৌঁছানো যায় রিছাং ঝরনা গেটে। পাবলিক বাসে ভাড়া পড়বে ১৫ টাকা। সেখান থেকে চাইলে যে কেউ হেঁটে পৌঁছাতে পারেন। তবে চাইলে বাস থেকে নামার পর মোটরসাইকেলে চেপে বসতে পারেন। সেখান থেকে পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ বেয়ে আপনাকে ঝরনার কাছে পৌঁছে দিতে জনপ্রতি নেবে একশ’ টাকা। খরচ কমাতে কিছুদূর হাঁটার পর মোটরসাইকেলে খরচ পড়বে পঞ্চাশ টাকা।
এ পথে ‘চান্দের গাড়ি’ চলাচল করলেও তা শুধুমাত্র রিজার্ভ আসা-যাওয়া করে। তবে সংখ্যায় চার থেকে পাঁচজন হলে খাগড়াছড়ি সদর থেকে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন রিছাং ঝরনায়।
তবে কারো কারো অভিযোগ, ভাঙা রাস্তার কারণে মার খাচ্ছে রিছাংয়ের পর্যটন। রাস্তার বেহাল দশার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালকের ‘বেপরোয়া গতি’ যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পর্যটকদের অন্যপথ ধরাতে পারে।
** মেঘের ভেলায় ভেসে মেঘ-পাহাড়ের দেশে
** ঝালেই পাহাড়িদের পছন্দ ‘সুমরিচ’
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
জেডএস/বিএস