পার্বত্য জেলা ঘুরে: পাহাড় মানেই অর্গ্যানিক ফলের সমাহার। কমলা, কলা, পেঁপে, জাম্বুরা, মাল্টার সে স্বাদ, গন্ধ মেলে না শহুরে ফলের সঙ্গে- সে চেহারা যতো ভালোই হোক।
১০ দিনের পাহাড় ভ্রমণে বাংলানিউজ টিমের সদস্যদের সকালে ভাত, ডাল, আলুভর্তার পর দিনের প্রধান খাবার হয়ে উঠেছিলো পাহাড়ি ফল। পর্যটকদেরও যারপরনাই আগ্রহ দেখা গেছে ফলফলাদির প্রতি।
খাগড়াছড়ির দেবতা পুকুর টিমের ৬০ টাকায় প্রায় ৪ কেজি ওজনের পেঁপে খাওয়ার গল্প ছিলো পুরো ট্যুরজুড়ে। ‘খাবারের জন্য খাগড়াছড়ি’- এটা রাঙামাটি-বান্দরবানের লোকেরাও একবাক্যে মেনে নেন। টের পেয়েছি আমরাও। ২০ টাকায় ডাব, ১০০ টাকা কেজিতে মাল্টা, ৫০ টাকা ডজনে কমলা, ৬০ টাকায় ৪ কেজির পেঁপে মেলেনি অন্য দুই জেলায়।
শুধু ফল নয়, সপ্তাহের হাট-বাজারের দিন বিচিত্র সব সবজি-ফল মেলে খাগড়াছড়িতে। এছাড়া পাহাড়ি খাবারের জন্য নাম বেশি পার্বত্য এ জেলাটির।
সাজেকের কমলার নাম দেশজুড়ে। রাঙামাটির মধ্যে পড়লেও সাজেককে নিজেদের অঘোষিত ‘সম্পত্তি’ বানিয়ে ফেলেছে খাগড়াছড়িবাসী। সে প্রভাব আছে খাগড়াছড়ি বাজারেও।
রাঙামাটিতে কলা মিললেও অন্য ফল তুলনামূলক কম আবার দামও বেশি। তবে শহর থেকে শুরু করে কেওক্রাডং, লামা, আলীকদমেও প্রচুর পরিমাণ ফল পাওয়া যাবে বান্দরবানে।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের ওয়াই জংশনে রয়েছে পাহাড়ি ফলের বেশ কতগুলি বড় বিক্রয় কেন্দ্র। এখান থেকেই পূর্বে ঢুকে গেছে রুমা সড়ক। সোজা চলে যাওয়া সড়কটি গেছে চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগর হয়ে থানচি। জমজমাট ফলের সমাহার এখানে।
পর্যটকের ভিড় এখানে বেশি হওয়ায় দাম একটু চড়া হলেও যতো ভিতরে ঢুকবেন কম দাম। রুমা থেকে বগালেক, কেওক্রাডংয়ের পথে বেশ কয়েকটি জায়গায় ফল বিক্রি হয়। কেউ বিক্রি করেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আবার কেউ নিজের বাড়িরটি এনে। স্বৈরাতন পাড়া থেকে জুস করে কমলা খেতে শেখালেন গাইড সাদেক। সেই স্বাদ আমরা নিয়েছি কেওক্রাডং পর্যন্ত। আর কমলাপাড়ার টুমসিংয়ের মিষ্টি পেয়ারার স্বাদও ভোলার নয়।
কেওক্রাডং ট্রেইলের উচ্চতম যাত্রী ছাউনি যখন ক্লান্ত পুরো টিমের আশ্রয় তখন পাশের কলা, জাম্বুরা আর কেওক্রাডংয়ের মিষ্টি কমলা দিলো বাড়তি শক্তি। এখানে দামে সস্তা। এক ডজন বেশ মিষ্টি আর বড় আকারের কলা মিললো মাত্র ২০ টাকায়। ঢাকায় যে জাম্বুরার দাম ৬০ টাকা ওখানে সেটা মিললো মাত্র ২০ টাকায়।
পাহাড়ের তাজা আর ফরমালিনমুক্ত ফলাহার শেষে কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় যখন পৌঁছুলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। পাহাড়চূড়া থেকে দেশের প্রায় সবগুলো সর্বোচ্চ চূড়া আর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করে পুরো টিম যাওয়া হলো গোসলে।
চূড়া থেকে প্রায় ২শ’ ফুট নিচের ঝিরির ঠাণ্ডা পানিতে গোসলে গিয়ে হলো ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। অসংখ্য কমলা গাছ সেখানে। এরইমধ্যে দুজন লোককে দেখা গেলো কমলা সংগ্রহ করতে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো জুয়েল বম নামে এক ব্যক্তির তিন হাজার কমলা গাছ আছে এখানে। আবহাওয়া তুলনামূলক ঠাণ্ডা হওয়ায় এখানকার কমলা পরিপক্ব হলে মিষ্টি। একটি নিজহাতে তুলে খেতে চাইলে তাদের একজন যেটা মিষ্টি হবে সেটা দেখিয়ে তুলতে বললেন। কয়েকটি কমলা খেতে দিলেন পুরো টিমকে। কোনটা মিষ্টি কোনটা টক তারা বাইরে থেকে দেখলেই বুঝতে পারেন।
পরেরদিন ভোরে আমরা যখন বগালেকের পথে তখন দুই পাহাড়ি নারীকে দেখা গেলো কমলা বহন করে রুমা বাজার নিয়ে যেতে। কথা বলে জানা গেলো সেখানে অপেক্ষা করছে গাড়ি।
কেওক্রাডং এলাকার একেকটি গাছে ৪-৫শ পর্যন্ত কমলা ধরে বলে জানা যায়। দাম ২০-৩০ টাকা হালি।
পাহাড়ে গেলে চলার পথে চোখ কান খোলা রাখলে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না ভুগে স্বাদ নিতে পারেন পাহাড়ি সব ফলের।
আরও পড়ুন:
** বগালেক-কেওক্রাডংয়ে কী খাবেন, থাকবেন কোথায়
** ছবির মতো লংগদু-১: ‘দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া...’
**বগালেকের মুগ্ধ গাছ!
**অজগরের মাংস খেতেই জেগে উঠলো বগালেক!
**সাদেকের কমলার জুসে পাহাড় মাড়ানোর ক্লান্তি দূর
**খাবারে পাহাড়ি সাজ-ঐতিহ্যের হলিডে ইন
**পাহাড়ি শিশুর খেলায় প্রাণ যায় মায়াবি পাখির
** পৃথিবীর সেরা পানি আমাদের পাহাড়ে!
** ৩ ঘণ্টার ট্রেইলে ঘেমে-নেয়ে কেওক্রাডংয়ের স্বর্গচূড়ায়
** রাস্তা হলে দেশি পর্যটকই জায়গা পাবে না বগালেকে
** পাহাড়ের ময়না যাচ্ছে পর্যটকের খাঁচায়
** হরেক পদের খাবারে ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’র শুভেচ্ছা
** পাহাড়চূড়ায় চোখের সামনে রংধনুর ’পর রংধনু (ভিডিওসহ)
** ইউরোপ-আমেরিকাকেও পায়ে ঠেলবে রাঙামাটির লংগদু
** ধসে যাচ্ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন
** রাঙামাটিতে বোটভাড়া নিয়ে ঠকবেন না যদি…
** বিকেলটা কাটুক হেরিটেজ পার্কে
** দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তির দেশে
** পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
** বাঁশের ভেতর মুরগি, পদের নাম ব্যাম্বো চিকেন
** পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব
** নীলাচলে ভোরের আলোয় মেঘের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এএ/জেডএম