প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথায় আশাবাদী তৃণমূলের নেতাকর্মী। তবে হতাশাও কম নেই।
আগামী নির্বাচনে দিনাজপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী নৌকার টিকিট পেলে সুবিধা পাবে বিএনপি- এমন দাবি তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত দীর্ঘ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরাট গ্যাপ তৈরি করেছেন। আমলা থেকে মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় তার কাছে যেতে পারেন না আমজনতা।
নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলেন মন্ত্রী মাহমুদ আলী।
চিরিরবন্দর-খানসামা উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদীয় এলাকায় মোট ১৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে তিন লাখের ওপরে ভোটার রয়েছে। মন্ত্রীর নিজ উপজেলা খানসামাতেই তিনি পরদেশি হিসেবে বিবেচিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজ উপজেলায় বিএনপি’র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তাকে জিতিয়েছিল চিরিরবন্দর উপজেলার ভোটররা। এবার হিসেব উল্টে যেতে পারে বলে ধারণা তৃণমূলের।
মাহমুদ আলী মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন তার ছোট ভাই জেড এইচ এম আলী শামীম। টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন কাজে টেন্ডারবাজি ও কমিশন বাণিজ্যের ওস্তাদ মন্ত্রীর ভাই।
নিয়োগ বাণিজ্যের জ্বলন্ত উদাহরণ পাকেরহাট ডিগ্রি কলেজ। খানসামা থানা ৫ নং ভাবট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাফিকুলের ছোট ভাই শরিফুল ইসলামকে ২৮ লাখ টাকার বিনিময়ে এই কলেজে নিয়োগ দিয়েছেন শামীম।
এই পাকেরহাট ডিগ্রি কলেজ জাতীয় করণেও মন্ত্রী ক্ষমতার প্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে শর্ত দেন, আমি কলেজ জাতীয়করণ করে দিতে পারি, তবে আমার ভাগ্নেকে অধ্যক্ষ করতে হবে। এই শর্তে কলেজ জাতীয়করণ করা হয়। তার ভাগ্নে এক সময় শিবিরের নেতা হিসেবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন। একই কলেজের লাইব্রেরিয়ান করেছেন মন্ত্রীর ভাগ্নিকে।
মন্ত্রীর ভাই শামীম এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পাকেরহাট ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, চিরিরবন্দর-খানসামায় যতো নিয়োগ, সবই মন্ত্রীর ভাইয়ের হাত ধরে হয়। এমনকি সরকারি সব প্রকল্প থেকেই তিনি কমিশন খান। এখন আগামী নির্বাচনের খরচের কথা বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিচ্ছেন।
জেড এইচ এম আলী শামীম থাকেন দিনাজপুর সদরে। ওখান থেকেই এলাকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন মাহমুদ আলী নিজের দল ভারী করতে বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগীদের কাছে টানছেন বলে অভিযোগ করেন গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহাদত হোসেন বাবুল।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রী ভদ্রলোক, বড় আমলা, কিন্তু নেতা নন। তিনি পাকেরহাট ডিগ্রি কলেজে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন- আমি মাটি ও মানুষের নেতা না। নেত্রী আমাকে ওপর থেকে নেতা বানিয়েছেন। আমি ওপর থেকেই কাজ করবো। আমি নেতা হতে চাই না।
তিনি আরো বলেন, মন্ত্রীর ভাই এলাকায় এমন কোনো নিয়োগ নেই যেখান থেকে তিনি টাকা নেননি।
এ কারণে আগামী নির্বাচনে দিনাজপুর-৪ আসনে নৌকাকে পাড়ি দিতে হলে তার বিকল্প প্রার্থী মিজানুর রহমান মানুকেই দিতে হবে নৌকার টিকিট। না হলে বিএনপি পাস করবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ধীমান চন্দ্র দাস বলেন, মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি ১৮টি ইউনিয়নের নামই বলতে পারবেন না। আমি লিখিত দিতে পারি, এখানে মন্ত্রী মনোনয়ন পেলে বিএনপি জিতবে।
খানসামা উপজেলা বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রী মাহমুদ আলী। কিন্তু এলাকা চালান তার ভাই শামীম। রাস্তার কাজ হোক আর যে কাজই হোক তাকে কমিশন না দিলে কোনো কাজ হয় না। এবার যদি ভোট হয়, আর যদি মন্ত্রী নৌকা পায় তাহলে বিএনপি জিতবে নিশ্চিত। এখানে সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানুই জনপ্রিয়। তিনি সবার সঙ্গে কথা বলেন, যোগাযোগ রক্ষা করেন।
মন্ত্রী গত মাসে খানসামা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহিদুজ্জামান শাহকে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছেন। এনিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মো. আখরুজ্জামান মিয়া ও শিল্পপতি হাফিজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
এসএম/এসআই