রাজনগর উপজেলা সদরের চিত্র এমন। এসব হয়তো উন্নয়নের সূচকের মধ্যে পড়ে না।
মাছ-মাংসের শেডে বিক্রি করা হয় শুধুই মাছ। বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে যেভাবে বিভিন্ন উৎসব-তিথিতে গরু ‘ভাগা দেওয়া’ হয়। রাজনগর উপজেলা সদরের বাজারের অবস্থাও তেমনি। মাংসহাটিতে শবেবরাত, ঈদুল ফিতরসহ বিভিন্ন তিথিতে গরু ভাগা দেওয়া হয়। তবে সপ্তাহে তিনদিন ছাগল জবাই করা হয় বলে জানালেন মিজান মিয়া।
রমজান শুরুর আগের দিন শনিবার (২৭ মে) দেখা গেল উৎসবমুখর পরিবেশ। দু’টি গুরু ও একটি খাসি জবাই করা হয়েছে। তবে অন্যান্য বাজারের মতো কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে না। লম্বা পলিথিন বিছিয়ে ভাগা বসানো হয়েছে। প্রত্যেকটি ভাগা ৫’শ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। একেকটি ভাগায় এক কেজি দু’শ গ্রামের মতো মাংস পড়েছে। আর খাসির মাংস ভাগায় পড়েছে ৮’শ গ্রামের মতো।
খাসির মাংসের ভাগাগুলো দারুণ করে সাজানো। নিচে মাংস তার উপর চর্বি, সবার উপরে দুই টুকরা করে কলিজা বসানো। খানিকটা ফুলের মতো দেখাচ্ছে মাংসের ভাগাগুলো। দামাদামির কোনো কারবার নেই। আবার ভাগার মধ্যে কোনো তারতম্য নেই।
শহরের সর্বোচ্চ ভবনের উচ্চতা ৫ তলা। তিন/চারতলা ভবন রয়েছে অল্প সংখ্যক। বেশিরভাগেই আধাপাকা। প্রশাসনিক ভবনগুলোও অনেকটাই অগাছালো। কষি অফিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়টি তো রীতিমতো ভূতুড়ে দেখায়। চারদিকে আগাছায় ছয়লাপ।
উপজেলা সদরের রাস্তাঘাটও বেশ নাজুক। প্রধান সড়কটির কিছুটা চলার উপযোগী থাকলেও লিংক রোডগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। খানাখন্দে ভরা।
‘দ্বিতীয় লন্ডন’ বলে খ্যাত বৃহত্তর সিলেট-অঞ্চলের একটি উপজেলা সদর এমন অনগ্রসর থেকে যেতে পারে ভাবনার মধ্যেও ছিল না। তাই এর এমন হাল দেখে বেশ অবাক হতে হলো। ভালো বাজার-সদাইয়ের জন্য জেলা সদরই ভরসা।
মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর মিলে সংসদীয় আসন। বরাবরই সদর থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তাই নির্বাচিত হয়েই সবার সুনজর সীমাবদ্ধ থেকেছে কেবল মৌলভীবাজার সদরের শ্রীবৃদ্ধির দিকে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও সদ্য প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীও ব্যতিক্রম ছিলেন না। কালেভাদ্রে যেতেন রাজনগরে।
স্থানীয়রা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সমর্থন পরিবর্তন করেছেন সময় সময়ে। যাদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু স্থানীয়দের ভাগ্যের পরিবর্তন তবু হয়নি। যে কারণে এখানকার মানুষ কাউকেই আর বিশ্বাস করতে চান না। নির্বাচন, ভোট এসব নিয়েও বীতশ্রদ্ধ অনেকে। কেউ কেউ তো আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে না-ও যেতে পারেন। ক্রমাগত আশাভঙ্গই এর কারণ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সায়রা মহসীন বাংলানিউজকে জানান, রাজনগর অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে একথা সত্য। তবে আমার স্বামী প্রয়াত মহসীন আলী একে রাজারনগর গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কাজও শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করার আগেই বড় অসময়ে চলে গেলেন।
সায়রা মহসীন বলেন, ‘আমি শুকলাকান্দি গ্রামে গেছিলাম বিদ্যুৎ উদ্বোধন করার জন্য। আমার আগে সেখানে কোনো এমপি যাননি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। আমাকে পেয়ে তারা খুবই খুশি। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি রাজনগরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
জেলাসদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজনগর উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৩২ হাজার ৬’শ ৬৬ জন। উত্তরে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ, পূর্বে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, দক্ষিণে মৌলভীবাজার সদর ও কমলগঞ্জ, পশ্চিমে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা এই উপজেলায় কলেজ মাত্র দু’টি, মাধ্যমিক স্কুল ১২টি, নিম্ন মাধ্যমিক ৪টি আর মাদ্রাসা রয়েছে ৪টি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এসআই/জেএম