পুনর্ভবা নদীটিই দিনাজপুর সদর উপজেলা ও বিরল উপজেলার মধ্যে বিভক্তি রেখা টেনে দিয়েছে। ব্রিজে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার যাত্রা শুরু।
ব্রিজ থেকে নামতেই আশেপাশের দোকানগুলোর সাইনবোর্ডে দেখেই নিশ্চিত হওয়া গেল বিরলের পথে যাত্রা শুরু। রাস্তাও খুব চমৎকার। কোনো খানাখন্দ নেই। কোনো ঝাঁকি ছাড়া গাড়ি এগিয়ে চলছে বোচাগঞ্জের দিকে। প্রায় ঘণ্টাখানেক চলার পর বোচাগঞ্জ উপজেলা সদরে পৌঁছা গেল।
সেখানেই এক চা স্টলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন রামাচন্দ্র রায়। বাজারেই টেইলারিং শপ রয়েছে তার। ভোটের কথা বলতেই যেন একটু লজ্জা পেলেন। বললেন-আমরা অশিক্ষিত মানুষ। এতো হিসেব নিকেষ কী আর বুঝি? এরপর অন্য আলাপের এক পর্যায়ে জড়তা কাটল। এরপর নিজে থেকেই শুরু করলেন কথা বলা। তার সঙ্গে যুক্ত হলেন সাইজ উদ্দীন। এরপর মোছাম্মত খায়রুন নাহার সহ আরো অনেকের সঙ্গেই কথা হলো।
তাদের কথায় ওঠে এলো বোচাগঞ্জের চেয়ে বিরলে ভোট বেশি। আর খালিদ মাহমুদের বাড়ি এ উপজেলাতেই। বিরলে বাড়ি লে.জে মাহবুবের। তবে খালিদ মাহমুদ ক্ষমতাসীন দলের এমপি। তাই উন্নয়ন কাজও করেছেন ঢের। বিরল-বোচাগঞ্জের রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়নের জোয়ার বইছে।
তাদের কথার প্রমাণও পাওয়া গেল বোচাগঞ্জের গ্রামের ভেতর দিয়ে যখন বিরলের রাস্তা মাড়াতে হলো। প্রতিটি অলি-গলিরই পাকা রাস্তা। কোথাও চোখে পড়ল না কোনো ভাঙা রাস্তা। এছাড়া নতুন করে অনেক পাকা রাস্তাও তৈরি করা হচ্ছে।
এখানকার রাজনীতির একটা ইতিবাচক দিক হলো, দলীয় ভিত্তিতে মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করা হয় না। আবার দলীয় হাঙ্গামাও নেই। নেই আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলও। সব মিলিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তার হাতে নৌকার গতিধারাও এখানে অপ্রতিরোধ্য।
অন্যদিকে লে.জে মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে খোদ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীদের মধ্যেই রয়েছে বিস্তর দ্বিধাদ্বন্দ্ব। এর বড় কারণ তিনি গত সাত বছরে এলাকায় তেমন একটা যাননি বলে সাধারণ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। অনেকে বলছেন, সাত বছরে তাকে সাতবারও নাকি এলাকায় দেখেননি কেউ। এমন অবস্থায় দলীয় কর্মসূচি পালন করতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতও কেউ নেই। কারণ এখানে দলে কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। এজন্য অনেকেরই অভিমত, তার পরিবর্তে এবার বিকল্প কোনো প্রার্থী এলেই বরং ভালো।
অনেক এলাকাবাসীর মতে, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ের নামলে লে.জে. মাহবুব হয়তো বড়জোর ৩০ শতাংশ ভোট পাবেন। তবে ‘নিউ ব্লাড’ বা তরুণ কেউ হলে হয়তো পাবেন এর চেয়ে ঢের বেশি ভোট। তাছাড়া লড়াইটাও হবে অনেক অংশগ্রহণমূলক। অনেক সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও খালিদ মাহমুদকেই ভোটটা দেবেন। কেননা, বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকায় শান্তিতে বসবাস করছেন। এছাড়াও এ আসনে খালিদ মাহমুদের উন্নয়নই তাকে এগিয়ে নেবে। এছাড়া খালিদ মাহমুদ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প প্রার্থীও নেই দিনাজপুর-২ আসনে।
এদিকে জেলা বিএনপির সদস্য বোচাগঞ্জের ভোটার পিনাক চৌধুরী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও মনোনয়ন-প্রত্যাশী ছিলেন। সে সময় তিনি এই মর্মে প্রচারণা চালিয়েছিলেন যে, বিএনপি নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন নিয়ে আসবেন।
এলাকাবাসীদের অনেকে বলছেন, এবারও তিনি নির্বাচনে আসবেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন সীমিত আকারে। পিনাক চৌধুরীর বাবা ইয়াজুল হক চৌধুরীও রাজনীতি করতেন। তিনি এরশাদের আমলে একবার সংসদ নির্বাচন করেছেন।
বিরল উপজেলার নাগরবাড়ীর ভোটার ইলিয়াছ আলী বাংলানিউজকে বলেন, কেবল পিনাক চৌধুরী নির্বাচন করলেই খালিদ মাহমুদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
** জনগণের নেতা জিয়া, পেইড কর্মীতে চলেন মোস্তফা
** বিএনপির চাপানো আমিনুল নয়, ভোটারদের পছন্দ বাইরুল
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
ইইউডি/জেএম