ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

নাটোর সদরে নৌকা পেতে টক্কর সেয়ানে সেয়ানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
নাটোর সদরে নৌকা পেতে টক্কর সেয়ানে সেয়ানে (বাঁ থেকে) শফিকুল ইসলাম শিমুল, আহাদ আলী সরকার ও শরিফুল ইসলাম রমজান

নাটোর থেকে: তৃণমূলের চায়ের দোকানগুলো যেন মিনি সংসদ। মফস্বল শহর হোক কিংবা গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজার, এলাকার রাজনীতির খোঁজ-খবর পেতে চায়ের দোকানগুলো এক একটি তথ্যের খনি। 

নাটোরের স্থানীয় রাজনীতির হালচালও বোঝা যাচ্ছে চায়ের দোকানগুলোতে। সেগুলোর আড্ডায় বসে পাওয়া যাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম চিত্রও।

পথে-ঘাটে ঘুরে আর বিভিন্ন আড্ডায় বসা রিকশাচালক, দিনমজুর, রাজমিস্ত্রিসহ খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে মিলছে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে নানা তথ্য। পাওয়া যাচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের নানা খতিয়ানও।

নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল। জেলার রাজনীতিতে তরুণ এই রাজনৈতিক নেতার উত্থান কিছুটা নাটকীয়।

চারদলীয় জোটের শাসনামলে উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের পেশিশক্তির রাজনীতির জবাবে নাটোরের রাজপথে আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন তরুণ নেতার উত্থান ঘটে, তাদেরই একজন এই শিমুল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। উমা চৌধুরী ও বাছিরুল রহমান খান চৌধুরী এহিয়া

২০১৩ সালে নাটোরের প্রাণকেন্দ্র কানাইখালি মোড়ে মোহাম্মদ নাসিমসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জনসভার মঞ্চে সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের সঙ্গে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন জেলা যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শিমুল।

এ ঘটনার পরই মূলত রাজনীতির লাইমলাইটে চলে আসেন শিমুল। ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে আহাদের। এক বছর পরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। মনোয়ন পেয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শিমুল।

নির্বাচনে জিতে আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন শিমুল। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের সঙ্গে পুরনো দ্বন্দ্ব তো ছিলোই। ক্ষমতায় আসার পর নাটোর শহরসহ জেলার সব স্তরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার দ্বন্দ্ব তৈরি হয় বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি বাছিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার সঙ্গেও।

আহাদসহ এ তিনজনও আগামী নির্বাচনে নাটোর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে।

আহাদ আলী সরকার সম্পর্কে শহরের অনেকেই বলেন, ব্যক্তিগতভাবে সজ্জন এই রাজনীতিবিদের ভুল ছিলো মন্ত্রী থাকাকালে ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।   তাকে ডুবিয়েছেন তার দুই ছেলে। এখন মন্ত্রীর ক্ষমতাও নেই। ছেলেদের সেই দাপটও আর নেই। অবশ্য কিছুটা কোণঠাসা হলেও জেলার রাজনীতিতে এখনও নিজের বলয় ধরে রাখতে পেরেছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ আহাদ আলী সরকার। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের দৌড়ে শিমুলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি।

আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী উমা চৌধুরী জলি। নাটোর পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র। রাজনীতিতে নবাগত হলেও পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের শেকড়টা অনেক গভীরে প্রোথিত। তার বাবা প্রয়াত শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচরদের একজন। ছিলেন নাটোর আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ। প্রায় ২২ বছর আগে মারা গেলেও এখনও শহরের আপামর মানুষ সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এই মানুষটিকে। তারই মেয়ে উমা চৌধুরী জলি। নাটোর পৌরসভা নির্বাচন এবার সুষ্ঠু হয়েছে স্বীকার করেন বিএনপি নেতারাও। সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে উল্লেখযোগ্য ভোটের ব্যবধানেই পরাজিত করে মেয়র হন। জলিকে ঘিরেও রয়েছে আওয়ামী রাজনীতির একটি বলয়। নৌকা প্রতীক পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনিও।

জেলা যুবলীগের সভাপতি বাছিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়াও মনোনয়ন চাইবেন। শহরের প্রভাবশালী ও সম্ভ্রান্ত পরিবার চৌধুরী পরিবারের সন্তান তিনি। তাদের পরিবার একই সঙ্গে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারও বটে। তার চাচা আব্দুর রহমান চৌধুরী সেলিম মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁর মান্দায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের এক পর্যায়ে আহত হয়ে ধরা পড়েন। অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।

নাটোর শহরে পারিবারিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এই নেতা আর্থিকভাবেও প্রতিপত্তিশালী। এক সময় এমপি শিমুলের সঙ্গে দহরম-মহরম থাকলেও স্বার্থের দ্বন্দ্বে এখন তার ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী। শহরের পেশিশক্তির রাজনীতির টার্ফওয়ারের অন্যতম খেলোয়াড় এই এহিয়া। তাকে ঘিরেও দলে রয়েছে একটি গ্রুপ।

তবে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের দৌড়ে শিমুলের সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান। জেলা যুবলীগের দীর্ঘদিনের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর এ নেতা বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

নাটোরের সাধারণ মানুষও বলছেন, এমপি শিমুলের ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী এই চেয়ারম্যান রমজান। তার কাছের একজনের দাবি, রমজানের মূল ভিত্তি তার জনপ্রিয়তা। কারণ, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন সরাসরি ভোটে। আর বর্তমান এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ফাঁকা মাঠে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

বলা হয়ে থাকে, জনপ্রিয়তা কিংবা পেশিশক্তিতে এমপি শিমুলের সঙ্গে নাটোর শহরে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিতে পারেন এই রমজানই। তাই শিমুল বিরোধী বলয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্রও তিনি। শিমুলকে হটিয়ে সামনের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও জোর আশাবাদী তিনি নিজেও।

সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন কে পাবেন তা নিশ্চিত নয় নাটোর-২ আসনে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
আরএই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।