ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

শক্ত অবস্থানে আ’লীগ, সুযোগের অপেক্ষায় বিএনপি

শামীম হোসেন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
শক্ত অবস্থানে আ’লীগ, সুযোগের অপেক্ষায় বিএনপি জাফর আলী

কুড়িগ্রাম থেকে: কুড়িগ্রাম-২ (কুড়িগ্রাম সদর-রাজাহাট-ফলবাড়ী) আসনের গুরুত্বপূর্ণ এ জেলার অন্য তিনটি থেকে একটু বেশি। সদর আসন হওয়াতে সবার দৃষ্টি থাকে। তাইতো রাজনীতির মাঠের হিসাবে এ আসনের গুরুত্ব বেশি।

আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এখান থেকে উপনির্বাচনের তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে তিন উপজেলায় তার দল জাতীয় পার্টির তেমন কোনো প্রভাব বা সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। এজন্য এককভাবে নির্বাচন করতে গেলে তিনি অনেকটা ইমেজ সংকটে পড়তে পারেন বলে মত সাধারণ মানুষের।

অন্যদিকে ক্ষতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রেক্ষপট একটু ভিন্ন। তাদের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো হলেও শঙ্কাটা বেশি। তার কারণ হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, এ কুড়িগ্রামের ৪টি আসনের একটিও আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি নেই। জোটের কারণে ছেড়ে দিতে হয়েছে। আর এখানেই তাদের শঙ্কা। সামনের নির্বাচনেও যদি জোটের প্রার্থীদের ছেড়ে দিতে হয়!

তবে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তারা মেনে নেবেন। তবে দলের স্বার্থে হাইকমান্ডকে তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়া বিবেচনা করা উচিত বলেও মনে করেন তারা।    

আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক জাফর আলী জানালেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে আমরা কুড়িগ্রামের দলীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। ধারণা করছি আগামী বছর ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। যেহেতু জানুয়ারিতে এ সরকারের ৫ বছর পূর্তি হবে, তাই নিয়ম মতে আগেই নির্বাচন দিতে হবে।

এজন্য আমরা সম্প্রতি জেলা কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী বছরের জুনের মধ্যে সব থানা, ইউনিয়ন কমিটি করা হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ যে সব কমিটি রয়েছে, সেগুলো পুনর্গঠন করা হবে।

আসন্ন নির্বাচনের মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করার বিষয়ে আশাবাদী বলেও জানালেন জাফর আলী।

আওয়ামী লীগের ‌এ প্রবীণ নেতা বলেন, প্রতিপক্ষ হিসেবে এ আসনে বিএনপির তেমন কোনো সাংগঠনিক অবস্থা এবং জনসমর্থন নেই। আর জাতীয় পার্টির জনসমর্থন তো একেবারেই তলানিতে। এজন্য আমি মনে করি এখানে আওয়ামী লীগের কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবুও আমি কাউকে খাটো করে দেখছি না। এ আসনে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলা নেই। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাও নেই।

আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন। তিনি জানালেন, দলের উচিত সৎ, যোগ্য ও তরুণ মেধাবী নেতৃত্ব তুলে আনা। যারা বহু বছর দলকে সার্ভিস দিতে পারবেন।
এসএম আব্রাহাম লিংকন
এ ক্ষেত্রে তিনি বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের উদাহরণ টেনে এনে বলেন, তোফায়েল আহমেদ ২৫ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৭০ থেকে ২০১৭! এখন পর্যন্ত গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু সেই ভিতটা তৈরি করে দিয়েছিল বলেই তোফায়েল-আমুরা টিকে আছেন এবং জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সে জন্যই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দলের হাইকমান্ডকে আগামী নির্বাচনের জন্য ফ্রেশ, শিক্ষিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে বলে মনে করেন রাকসুর সাবেক এই ছাত্র নেতা।

দলের হেভিওয়েট সম্ভাব্য প্রার্থী জাফর আলী সম্পর্কে আব্রাহাম লিংকন বলেন, তিনি বর্তমানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রয়েছেন। তাকে ৫টি আসনের প্রতিনিধি করা হয়েছে। কুড়িগ্রামের চার আসন এবং নারী সংসদ সদস্যসহ মোট ৫টি আসন। ফলে তার মর্যাদাটা ৫ এমপির উপরে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ওনার বয়স হয়েছে, সম্প্রতি তিনি ব্রেনস্টোক করেছেন। জেলাবাসীও তাকে প্রতিনিধি বানিয়েছে। সব মিলিয়ে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। সেই বিকল্প নেতৃত্বটা পরিমার্জিত শিক্ষিত, সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধে চেতনাকে শক্তভাবে ধরে রাখতে হবে। এরকম নেতৃত্বই আনতে হবে।

আর জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের চৌধুরীর প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বিএনপি থেকে ভোট করে মাত্র ১২ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তার ইমেজ ভালো নেই। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য নিজেকে সেভ করার জন্য তিনি রাজনীতি করতে চান।

মহাজোটই হোক আর একক প্রার্থীই হোক কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পনির উদ্দিন আহমেদের নামও শোনা যাচ্ছে। যদিও তাকে নিয়ে দলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের অনেক শঙ্কা রয়েছে।

অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সোহেল হোসাইন কায়াকোবাদ সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন, বর্তমানের জেলা বিএনপির সব কমিটি সচল রয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা এবং উপজেলার সব কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে। আর সব কর্মসূচি আমরা পালন করি। তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে করতে হয়। কারণ আমাদের বাইরে বের হতে দেয় না। তাই নেতাকর্মীদের নিয়ে আমাদের দলীয় কার্যালয়ের এরিয়াতে থাকতে হয়।

নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে দলের জন্য আমি অনেকদিন ধরে কাজ করছি। অন্যরা তেমন একটা মাঠে নেই। শুধু পত্রিকায় বক্তব্যের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।

দলের গ্রুপিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাউন্সিলের পর থেকে দলের মধ্যে সব রকমের দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং মিটে গেছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আগামী নির্বাচনের এ আসনে বিএনপির নিরঙ্কুশ জয় হবে। কারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। আগামীবার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি জিতবে। আমাদের সুষ্ঠুভাবে গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ দিলে তারা বুঝবে কার জনপ্রিয়তা বেশি।

রুহুল কবির রিজভী নির্বাচন করবে না জানিয়ে এ বিএনপি নেতা বলেন, তিনি আমাদের একাধিকবার বলেছেন, এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন না। তবুও মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে।

বিএনপি থেকে আরো কয়েকজনের না শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক, বিএনপির সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম বেবু ও সাবেক মেয়র নুর ইসলাম নুরু।
 
তবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এবার মার্কা নয়, প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন। যার ব্যক্তি ইমেজ ভালো, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবে তাকেই ভোট দিবেন।

আবার দেশের স্বার্থে নির্বাচনের যেই প্রার্থী হোক না কেন মার্কা দেখেই ভোট দেওয়ার পক্ষেও রয়েছেন অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
এসএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।