এমনকি উজান-ভাটির এ লড়াই কুড়িগ্রাম জেলায় থাকা-না থাকার দিকেও গড়িয়েছে।
রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার সবগুলো এবং চিলমারী উপজেলার দুই ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের ভোট বেশি।
সরেজমিনে জানা গেছে, ভারতের আসাম ও মেঘালয় এবং পাশের চিলমারী উপজেলা থেকে এসে এখানে স্থায়ী হওয়া মানুষেরা উজান আর জামালপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও পাবনা থেকে আসা মানুষেরা ভাটির ভোটার হিসেবে পরিচিত।
রৌমারী এলাকায় রীতি আছে, উজানের ঘরে ভাটিরা মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি, কিন্তু ভোট নয়। অন্যদিকে ভাটির ঘরে যদি কোনো উজানের মেয়ে বউ হয়ে আসেন, তাহলে তিনিও ভাটির প্রার্থীকেই ভোট দেন।
এ লড়াই প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই চলতে থাকে।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন ভাটি অঞ্চলের প্রার্থীরা। ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কেবলমাত্র ভাটির হওয়ায় সাইকেল প্রতীকে জয়ী হন জেপি’র প্রার্থী রুহুল আমিন। পরাজিত হন উজানের বলে পরিচিতি পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেন।
রুহুল আমিনের আদি নিবাস জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায়। অন্যদিকে জাকির হোসেনের পরিবারের আদি বাস ছিলো ভারতের আসামে। ফলে উজান-ভাটির লড়াইয়ে হেরে যান জাকির।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাটি অঞ্চলের লোকের বসবাস রৌমারী উপজেলা সদরের বাইরেই বেশি। যাদুরচর ও বন্দবেড় ইউনিয়নে ভাটি অঞ্চলের ভোটার বেশি। এ দুই ইউনিয়নেরই ভোটার প্রায় ৬০ হাজার হওয়ায় জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে ভোট এলেই। শৌলমারী ইউনিয়নে উজান-ভাটি সমান সমান হলেও উজানের ভোট বেশি রৌমারী সদর ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নে।
বন্দবেড় ইউনিয়নের নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘যারা আগে আইচে তারা উজান, যারা পরে আইচে তারা ভাটি। আমাদের মইদে (মধ্যে) ভাষারও মিল নেই। ভোটের আগে উজান-ভাটির লোক যার যার দিকে এক হইয়া যায়। নিজেগো লোক যদি লাইতথা-লাতথিও (লাথি মারামারি) করে, ভোটের সময় ওরা এক হয়’।
শৌলমারী এলাকার কামরুল ইসলামের পূর্বপুরুষ জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করেন। ভাটির প্রার্থীকে ভোট দেন তিনি।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভোটের সময় আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি দেখি না। ভাটির প্রার্থী হলেই ভোট দেই। কারণ, উজানের মানুষেরা আমাদের মানুষই মনে করেন না। তারা (উজান) মনে করেন, রৌমারী উপজেলা তাদের একার’।
উজান-ভাটির এ লড়াই শুধু ভোটের ক্ষেত্রেই নয়, জেলা সদর নির্বাচনেও চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কুড়িগ্রাম সদর থেকে রৌমারীর যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম, আসা-যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌকা। প্রায় তিন ঘণ্টা নৌকা ভ্রমণ করেই জেলা সদরে আসতে হয়। এ কারণে ভাটির মানুষেরা কুড়িগ্রামের বদলে জামালপুর জেলায় যেতে আন্দোলন করছেন। তবে উজানের মানুষজন কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যেই থাকার পক্ষে।
শৌলমারী ইউনিয়নের আকবর হোসেনের আদি নিবাস জামালপুরে। কুড়িগ্রাম থেকে বের করে রৌমারীকে জামালপুর জেলায় অন্তর্ভূক্ত করার পক্ষে তিনিও।
আকবর বলেন, ‘কোনো মামলা-মোকদ্দমা না হলে নদী পার হয়ে কুড়িগ্রাম সদরে যাই না। আমরা সব কাজ জামালপুর থেকে করি, কুড়িগ্রাম জেলায় থাকার পক্ষে না। মনে হয়, কুড়িগ্রাম থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করি’।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর