বাঁশের সাকো পার হয়েই উপজেলা শহরে আসতে হবে। উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কও এবড়োথেবড়ো।
উপজেলা শহরের অধিকাংশ সড়কেরই দশা বেহাল। বৃষ্টিতে চলাচল করাও মুশকিল। এই অবহেলিত জনপদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী রুহুল আমিন সাইকেল প্রতীকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এর আগে রৌমারী সদর ইউনিয়ন থেকে দুই বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার আর কোনো উন্নয়ন কাজ করেননি। এমনকি জনগণের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগও রাখেন না। তাই জনপ্রিয়তা বলতে বর্তমানে শূন্যের কোঠায়। অথচ চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি সব সময় মানুষের পাশে থাকতেন বলে জানান স্থানীয়রা।
দাঁতভাঙ্গা চর ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন। বর্তমানে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সড়কের বেহালদশা থাকায় ভালো মতো অটোও চালাতে পারেন না তিনি।
এলাকায় কেমন উন্নয়ন হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়ন কেমন হয়েছে চোকখেই দ্যাকবার পারছেন। একটা কাজও হয় নাই। রুহুল আমিনকে এমপি করার পর তারে চোকখেও দেখলাম না। ভোটের আগে দেখছিলাম, ভোট হইয়া ওক আর দেখিনি। এরে চেয়ারম্যান হিসেবে পাইছি, এমপি হইয়া পাই না। ’
উপজেলা সদর থেকে টাপুর চর পর্যন্ত মাটির সড়ক বেশী। একটু বৃষ্টি হলেই চলাচল করা কঠিন।
টাপুর চরের কাশেদ ব্যাপারী বলেন, আমার মনে হয় রৌমারী থানার মতো এমন খারাপ এলাকা আর নাই। মোটরসাইকেল দিয়ে চলাচল করলেও তিন বার নামা লাগে। প্রতিদিনই গাড়ি উল্টে মানুষ পড়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙ্গন বলার মতো না, ভাষায় প্রকাশ করার মতোও না। দ্রুত সরকারের উচিত নদী ভাঙ্গনে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয়া। রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী রক্ষা করা দরকার। এমপির বাড়ি শুকনায় বারবান্দায়। এমপি নদী ভাঙ্গনের কষ্ট ক্যামনে বুঝবে। ’
বর্তমান এমপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি (এমপি) যে প্রতিশ্রুতি দিইছে না মানছে না। মানার কোনো আশাও দেখছি না। এলাকার প্রধান সমস্যা নদী ভাঙ্গন, রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ। এর একটি সমস্যাও বর্তমান এমপি সমাধান করছে না। ’
ঝগড়ার চরের বাসিন্দা মহির উদ্দিন। উপজেলা শহরে ছোট একটা ওষুধের দোকান আছে তার। দোকানের সামনে মাটির সড়কটি এবড়োখেবড়ো হওয়ায় ওষুধ বেচাকেনাতেও ভাটা।
রৌমারী উপজেলায় পাকা রাস্তা মাত্র ১২ কিলোমিটার। তাও আবার ভাঙ্গাচোরা। অন্যদিকে কাঁচা রাস্তা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। বৃষ্টির সময় এসব সড়কে যাতায়াত করা কঠিন।
ভাটি অধ্যুষিত এলাকা যাদুর চর, শৈলমারী, চর শৈলমারী ও বন্দবেড় ইউনিয়নে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তবে সদর হওয়ায় রৌমারী ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নে সামান্য উন্নয়ন হয়েছে।
রৌমারী, দাঁতভাঙ্গা, কর্ত্তিমারী, বড়াইকান্দি হাট, খেয়ার চর হাট, গোয়ালগ্রাম হাট, চুলিয়ার চর হাট, চর শৌলমারী হাটেও মাটির সড়ক মাড়িয়ে নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন স্থানীয়রা।
খেয়ার চর হাটের বাসিন্দা কামাল মাতবর বলেন, জাকিরের ওপরে (আ’লীগ) গোষ্যা (অভিমান) করে রুহুলেরে ভোট দিইছে। এহন ওর খবর নাই। আমার এলাকায় কোনো এমপি নাই। থাকলে রাস্তায় কাম-কাইজ হইতো। ’
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের অন্যতম সমস্যা নদী ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের মুখে চর শৌলমারী, বন্দবের, যাদুরচর, নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কয়েক হাজার বসতবাড়ী ও আবাদী জমি। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতেও এমপিকে কাছে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাবেক এমপি জাপা নেতা গোলাম হোসেনের ছোট ভাই বর্তমান এমপি রুহুল। ভাইয়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়া ভাটি অঞ্চলের মানুষ রুহুল আমিন। বড় ভাই ও ভাটি নাম ব্যবহার করে এমপি হয়েছেন তিনি।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন করেননি। এমনকি স্থানীয় লোকজনও তাকে কাছে পেতেন না। জাকিরের স্ত্রী সুরাইয়া আখতার মূলত বিকল্প এমপির দায়িত্ব পালন করতেন।
যে কারণে জাকির হোসেনের ওপরে মান-অভিমান ও বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সাইকেল নিয়ে ফাঁকা ফিল্ডে গোল মেরেছেন রুহুল। বর্তমানে তিনি পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এমআইএস/জেডএম