ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

জাপার ঘাঁটি এখন আ’লীগের দুর্গ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৭
জাপার ঘাঁটি এখন আ’লীগের দুর্গ! শেখ হাসিনা, জয়, এরশাদ ও রাঙা

রংপুর থেকে ফিরে:  জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত রংপুর এখন আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত হয়েছে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের ব্যানারে আওয়ামী লীগের জয়ের পরই বদলে যেতে থাকে রংপুরের রাজনীতি। বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন ও অন্যদিকে জাপার সাংগঠনিক দুর্বলতা আর দুরদর্শী নেতৃত্বের অভাবে আস্থা হারিয়েছেন এরশাদ।

তারা এও বলছেন, রংপুর-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ (সংসদীয় আসন ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩ ও ২৪) আসনের সবক’টিতে যদি আগামীতে আওয়ামী লীগ জয় পায় তবে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

জেলায় ভোটযুদ্ধ আওয়ামী লীগ ও জাপার মধ্যে।

তবে নিজ জেলায় দিন দিন দুর্বল হচ্ছে এরশাদের দল; সদরে তাদের অফিস খোলে কালেভদ্রে। উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা।

রংপুর জাপার প্রচার-প্রকাশনা পর্যায়ের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ছয় আসনে খুব করে চেষ্টা করলে অন্তত দুটিতে জয়ের মুখে দেখা যেতে পারে। বাকিগুলোতে হার সুনিশ্চিত! আর ভালো মানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা গড়ে তুলতে ঢেলে সাজাতে হবে দল। তার মতে, এরশাদ বৃহত্তর রংপুরের জয় নিয়ে মাথা ঘামান, কিন্তু ঘরেই যে পথ ঠিক নেই তা বোঝেন না! জাপাতে আরও একটি বড় সমস্যা- এখানে কেউ কাউকে মানেন না!

রংপুর-৬, পীরগঞ্জ আসনটি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা এখানে পরাজিত হন জাপার প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মণ্ডলের কাছে। তবে নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনে পরপর এমপি হয়েছেন শেখ হাসিনা। একাদশ নির্বাচনেও তাকেই সম্ভাব্য বিজয়ী ধরা হচ্ছে। তবে সরেজমিনে অনেকে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে সংসদ সদস্য (এমপি) দেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

পীরগঞ্জে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। এই মণ্ডল এখন জাপা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিএনপিতে। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য।

এখন জাপার প্রার্থী হিসেবে নূরে আলম যাদু দলীয় চেয়ারম্যানের সবুজ সংকেত পেয়ে মাঠে কাজ করছেন। তবে যেই আসুক শেখ হাসিনা অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

রংপুর-৫, মিঠাপুকুরে তিনবার এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। এবারও তিনি; না হলে প্রস্তুত আছেন তার ছেলে রাশেক রহমান। এছাড়া নৌকার মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন মওলা এবং মিঠাপুকুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন। জাপা থেকে আছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা সভাপতি শিল্পপতি এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর।

বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খাজা নূর। তবে জামায়াত সমর্থন থাকায় উপজেলা জামায়াতের আমির ও বরখাস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারেন বলে লোক মুখে শোনা যায়।

এই আসনে মূল লড়াই আওয়ামী লীগের আশিকুর ও জাপার জাহাঙ্গীরের মধ্যেই।

রংপুর-৪, কাউনিয়া-পীরগাছায় পরপর দুবারের এমপি নৌকার টিপু মুনশী। তার বিকল্প নেই। এরশাদের পক্ষ থেকে আছেন ব্যবসায়ী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল। ধানের শীষে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা। তবে এখানে লড়াই টিপু এবং এমদাদ ভরসার মধ্যেই হবে।

রংপুর-৩ সদর আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরপর চারবার এমপি তিনি (অষ্টম নির্বাচনে এমপি ছিলেন তার ভাই দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের)। একাদশে লড়বেন এরশাদই। এখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক আমলা চৌধুরী খালেকুজ্জামান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) পরিচালক ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম। আর বিএনপির অবস্থা সদর আসনে নাজুক। নেতাকর্মীদের নামে মামলা থাকায় কার্যালয় খোলা হয় লুকোছাপা করে!

এরশাদের ইমেজে এখানে তিনিই ফের জয় পাওয়ার জোর দাবিদার।

রংপুর-২, তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জে বর্তমান এমপি আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক)। তিনি ছাড়াও নৌকার মনোনয়ন চান সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আনিছুল হক চৌধুরীর ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা।

এই আসনে আওয়ামী লীগের সংবাদ পড়তে ক্লিক করুন: দুই ভাইয়ের বিরোধে আ'লীগের সর্বনাশ!

জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু। বাংলানিউজকে সাবলু চৌধুরী বলেন, বরাবরই আসনটি জাপার ছিল। কেবল ২০১৪ সালে ভোট না হওয়াতে ওয়াকওভার পেয়ে ডিউক জিতে যান। আগামীতেও এখানে লাঙ্গল প্রতীকেরই জয় হবে। আর সেই লাঙ্গল এরশাদ স্যার আমাকে নিয়েছেন।

তিনি মত দেন, রংপুরে কোথাও যদি জাপার জয় হয় তবে এরমধ্যে রয়েছেন তিনি এবং ৩ নম্বর আসনের এরশাদ।
 
রংপুর-১, গঙ্গাচড়ায় নৌকার মাঝি হতে চান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু। আর জাপা থেকে আছেন বর্তমান এমপি মসিউর রহমান রাঙা ও সাবেক এমপি জেলা জাপার আহ্বায়ক হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। এছাড়া বিএনপির সহ-সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু ও যুগ্ম সম্পাদক মোকাররম হোসেন সুজন দাঁড়াতে চান।

আরও পড়ুন:
যুদ্ধাপরাধী আজহারের সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবি
ধান ক্ষেতে ঐতিহ্যের মসজিদ!
ও ধান ভানরে...
চাল ভাজা ছাতুর সংসারে ভাবনাহীন ভবিষ্যৎ
জন্মভিটাতেই অস্তিত্ব সংকটে বেগম রোকেয়া
দুই ভাইয়ের বিরোধে আ'লীগের সর্বনাশ!
মন্ত্রী হবেন টিপু সেই প্রভাব ভোটে!
** টিপুর বিপক্ষে এমদাদেই ভরসা
একবার খেলে ভোলা যায় না হাড়িভাঙার স্বাদ
ঈদে ট্রেনেই নিশ্চিন্ত যাত্রা
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর! 


বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৭
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।