এই ভিআইপি আসন থেকে গত আড়াই দশকেরও বেশি সময়ে যারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেছেন তাদের সবাই ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করে ফেস্টুন ছাপিয়ে রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই সংসদ সদস্য হওয়া ব্যবসায়ী এম এ লতিফ। আর তিনবারের সংসদ সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর আসন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এই সমীকরণকে ভিত্তি করেই আড়াই দশকের প্রথা এবার ভেঙে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বন্দর এলাকার রাজনীতি সচেতন মানুষ। তাদের মতে, বন্দর আসনটি এবার ব্যবসায়ীদের কব্জা থেকে ফিরতে পারে রাজনীতিকদের কাছে।
কোণঠাসা অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ছিল এম এ লতিফের কাছে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, যারা আমাকে পছন্দ করেন না, তারা আমার সমালোচনা করছেন। আমাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন। আমি তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কখনো ভাবি না, জবাব দেয়ারও চেষ্টা করি না। তবে মানুষকে বোকা ভাবা ভুল। তারা অনেক বেশি সচেতন।
‘পরিবারে জন্মদাতাকে আমরা মা-বাপ বলি। তেমনি শেখ হাসিনা হচ্ছেন দলের মা-বাপ। তিনি যা চাইবেন সেটাই হবে। তিনি যদি নির্বাচন করতে বলেন অবশ্যই নির্বাচন করব। ’ বলেন এম এ লতিফ
গরীব-নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে কখনো বিনামূল্যে, কখনও ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য বিতরণ এবং ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে নিজের বলয় তৈরি করে অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টায় থাকা লতিফকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন খোরশেদ আলম সুজন। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের ছাত্রলীগের (বাকশালপন্থী জাতীয় ছাত্রলীগ) রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতা এখন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সুজন পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। যথারীতি প্রচারণাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ মনোনয়ন পরিবর্তন করে দেওয়া হয় এম এ লতিফকে।
খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, মনোনয়ন পরিবর্তনের পরও আমি বিদ্রোহ করিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হইনি। আমাকে বাদ দিয়ে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তিনি আওয়ামী লীগের লোক নন। নির্বাচনের পর তার কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হয়েছে তিনি জামায়াতের লোক। গুরুত্ব অনুযায়ী বন্দর এলাকায় কোন উন্নয়ন হয়নি। নাগরিক সমস্যা সীমাহীন আকার ধারণ করেছে।
মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও রাজনীতিতে সরব থাকা সুজন সম্প্রতি জোরালো আলোচনায় এসেছে নগরীর মহেশখালে বন্দরের দেওয়া একটি বাঁধ অপসারণের আন্দোলন করে। এছাড়া নাগরিক সংকট সমাধানের জন্য ধারাবাহিক সৃজনশীল ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টায় আছেন খোরশেদ আলম সুজন। বন্দর আসনের প্রতিটি ওয়ার্ডে তৈরি করতে পেরেছেন নিজের শক্ত বলয়।
সুজন বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে আমি রাজনীতিতে আছি। প্রত্যেক রাজনৈতিক কর্মীর স্বপ্ন থাকে সংসদে গিয়ে মানুষের কথা বলার। আমি এখন জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। দলের পরীক্ষায় আমি বারবার উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার রাজনৈতিক এবং সামাজিক কমিটমেন্ট আছে। আশা করি দল এবার আমাকে মূল্যায়ন করবে।
নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে এককালের ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলমের নামও। তবে তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী নন।
তিনি বলেন, বন্দর আসনে বর্তমানে যিনি এমপি আছেন এম এ লতিফ সাহেব, তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। ওনার অনেক সাফল্য আছে। তাই আমি মনে করি, এবারের মনোনয়নও উনি ডিজার্ভ করেন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় আছেন আলতাফ হোসেন বাচ্চুও। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থেকে প্রেসিডিয়ামেও গিয়েছিলেন। বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠন সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের।
আলতাফ হোসেন বাচ্চু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগ করেছি। যুবলীগ করেছি। এখন আওয়ামী লীগ করছি। সামরিক শাসনের সময়, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখন আমি আন্দোলন-সংগ্রামে কখনও পিছপা হইনি। বন্দর এলাকায় রাজনৈতিক-সামাজিক ও ব্যবসায়িক পরিচিতি আছে। দল মনোনয়ন দিলে আমি অবশ্যই জিতব।
মনোনয়ন চাইবেন চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমীর হোসেন দোভাষের নাতি নজরুল ইসলাম বাহাদুরও। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য দোভাষ বাড়িতে বেড়ে ওঠা বাহাদুর তিনবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহ পাবার মধুর স্মৃতিও আছে বাহাদুরের।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত নজরুল ইসলাম বাহাদুর বর্তমানে নগর কমিটির সদস্য। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন চাইব। আমার পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য, দলের প্রতি ত্যাগ এবং আমার জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিয়ে নেত্রী অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবেন। এই বিশ্বাস আমার আছে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সব অংকের উত্তর মিলবে এক জায়গায়। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা, নির্বাচনে এলে বিএনপি থেকে প্রার্থী কে হচ্ছেন, সেটাই অংকের আসল সূত্র।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
আরডিজি/টিসি/জেডএম