ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

গাইবান্ধায় ভালো অবস্থানে ডেপুটি স্পিকার, তবে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
গাইবান্ধায় ভালো অবস্থানে ডেপুটি স্পিকার, তবে! ছবিতে ডান থেকে: রওশন এরশাদ, ফজলে রাবিব মিয়া ও মাহমুদুল হাসান রিপন

সাঘাটা, গাইবান্ধা থেকে: গাইবান্ধার পাঁচ এমপির মধ্যে তুলনামূলক ভালো ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার অবস্থান। উন্নয়নে এবং জনপ্রিয়তায় অন্যদের চেয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি।

অনেকেই বর্তমান এমপির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বলেছেন, অনেকদিন ধরে তো তিনি খাচ্ছেন।

আরো একবার খাক।

প্রার্থী বাছাইয়ে নির্ভরশীল গাইবান্ধার জয়-পরাজয়

তবে সুবিধাজনক অবস্থান নিয়েও আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পার হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে এই নেতার।   জনপ্রিয়তা থাকলেও দলীয় কোন্দল এখানে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তেমনটি হলে ফুলছড়ি-সাঘাটা থেকে ৬ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার কপাল পুড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দলীয় কোন্দল নাকি এমন জটিল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

ফুলছড়ি ও সাঘাটা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনের ভরতখালী পুর্বপাড়া, উল্লাবাজার, সানকিভাঙা গ্রামে ঘুরে এমন কোন্দলের আঁচ পাওয়া গেছে।

এখানে আওয়ামী লীগের গ্রুপিং চরম অবস্থায় রয়েছে। গ্রুপিংয়ের একদিকে রয়েছেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া, আর অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন।   দু’জনের সমর্থকের মধ্যে ঘটেছে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও।

ফজলে রাব্বী মিয়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিও এবার মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন যেই পাক দলীয় কোন্দল নিরসন করা না গেলে আওয়ামী লীগের জন্য বিজয় ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। আর তেমনটি হলে জাপার ঘরে চলে যেতে পারে আসনটি। এখানে জাতীয় পার্টির বড় অংকের রিজার্ভ ভোট রয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের ‍সুযোগে তারা বাগিয়ে নিতে পারে আসনটি।

এ আসনে ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেযারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। ২০০১ সালে বিজয়ী হন বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। আর ২০০৮ সালে ফজলে রাব্বী মিয়ার কাছে পরাজিত হন তিনি। এবারও এই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুর রশীদ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুনতেছি রওশন এরশাদ এখানে ভোট করতে পারেন। আর যদি নির্বাচন না করেন তাহলে জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম শহীদ রঞ্জু ভোট করবেন। আমাদের প্রার্থীর অবস্থা অনেক ভালো।   ফজলে রাব্বী মিয়ার নিয়োগ বাণিজ্য ও আত্মীয়-স্বজনদের দুর্নীতির কারণে মানুষ তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

আর যদি জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট হয়, এই আসনটি চাইবে জাতীয় পার্টি। বিশেষ করে রওশন এরশাদ যদি ভোট করতে চান তাহলে কপাল পুড়তে পারে এলাকাবাসির কাছে ভেলু উকিল খ্যাত ফজলে রাব্বী মিয়ার। আর যদি রওশন ভোট না করেন তাহলে আসনটির জন্য আওয়ামী লীগ জোরালো দাবীদার।

উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ ফজলে রাব্বি মিয়ার মনোনয়নের বিরোধীতা করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অনেকে অভিযোগ করেছেন, ফজলে রাব্বী মিয়া মূলত ছিলেন জাতীয় পার্টির লোক। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন নি।

তিনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাইড লাইনে বসিয়ে রেখে নিজের মতো বলয় তৈরি করেছেন। আর নব্য আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে নিয়ে চলেছেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী তার উপর ক্ষুব্ধ। তারা চাইছেন সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রিপনকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।

সাধারণ মানুষ রিপন সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য করেন নি। তারা বলেছেন, রিপন ভালো ছেলে। তবে ভেলু মিয়ার প্রতি আলাদা ইমোশন দেখিয়েছেন তারা। লিটন নামের এক অটো চালক বাংলানিউজকে বলেন,  ভেলু উকিল মুরব্বি মানুষ, তার বয়স শেষ, দেই আরেকবার। রিপন তরুণ নেতা, তার তো অনেক সময় আছে।

গাইবান্ধার ৫টি আসনের অনেক এমপির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, এলাকায় না আসাসহ ব্যবহার খারাপ করার অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ফজলে রাব্বী মিয়ার আচার ব্যবহার নিয়ে এলাকাবাসির তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তিনি সময় পেলেই নির্বাচনী এলাকা ঘুরে যান।

আর যখন বাড়িতে থাকেন সকাল থেকে মধ্যরাত পর‌্যন্ত জনগণের কথা বলেন। এমনকি ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছেন কেউ এসেছে, তাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে কথা বলেছেন। তার এই গুণগুলো মনে রেখেছে সাধারণ মানুষ।

তার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। তারা বলেছেন, একচেটিয়া ঠিকাদারি করছে তার আত্মীয়রা। অনেকে জিরো থেকে হিরো হয়ে গেছে। এটা অনেকের চোখের বালু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফজলে রাব্বী মিয়া এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি এবারও মনোনয়ন চাইব। শুনেছি সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতিও চাইবেন। নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দেবেন। তার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে। নেত্রীর যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি মেনে নেবো।

মাহমুদুল হাসান রিপন বাংলানিউজকে জানান, এখানে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী আমার সঙ্গে রয়েছে। বর্তমান এমপি আগে জাতীয় পার্টি করতেন। তিনি জাপার কর্মী এবং তার আত্মীয়-স্বজন পরিবেষ্টিত হয়ে চলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে নেই।

আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানকার উন্নয়নে কাজ করছি। এলাকার বড় বড় দৃশ্যমান উন্নয়ন আমার হাতে হয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে, বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই।

তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।