ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

কঠিন মনোনয়ন লড়াইয়ে না'গঞ্জ বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
কঠিন মনোনয়ন লড়াইয়ে না'গঞ্জ বিএনপি নারায়ণগঞ্জের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

নারায়ণগঞ্জ :  আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডজনখানেক করে প্রার্থী মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে, কথা শুনছেন তাদের এবং নির্বাচন কেন্দ্রিক নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর)  আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপি সভাপতি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

বিগত সময়ে এ আসনে বিএনপির তেমন শক্ত কোন প্রার্থী ছিলো না। কিন্তু এবার নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই দলের দুজন শক্ত প্রার্থী মাঠে নেমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান আইনজীবী, সাবেক ছাত্রনেতা জাকির খান ও আবুল কালাম বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে এ আসনকে কেন্দ্র করে দলের কাজ করছেন।

বিগত আন্দোলন সংগ্রামের সময় দলের নেতাকর্মীদের মামলায় আইনি সহায়তা দিয়েছেন সাখাওয়াত। আন্দোলন সংগ্রামে জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মামলা লড়েছেন তিনি। শুধু বিএনপি নয়, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলা লড়েছেন সাখাওয়াত। অনেক মামলা এখনো চলমান রয়েছে, সেগুলোও তিনি পরিচালনা করছেন।

আরেক নেতা মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকদুসুল আলম খন্দকার খোরশেদ। মহানগর যুবদল, বিশেষ করে সদর থানা ও বন্দর থানা যুবদলের নেতাকর্মীরা তাকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বেশী উৎসাহিত করছেন। বিগত সময়ে বিএনপির সকল আন্দোলন সংগ্রামে খোরশেদ যুবদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। পুলিশের পিটুনি, একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খাটা, নাশকতার অনেক মামলার আসামি হওয়াসহ নানাভাবে মাঠে থেকে নির্যাতিতও হয়েছেন খোরশেদ। যুবদল ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পছন্দও তাই খোরশেদ।

এদিকে এ আসনে বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সদস্য আবুল কালাম বর্তমানে মহানগর বিএনপির সভাপতি হয়েও দলের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না তেমন। দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারছেন না তিনি। বিগত সময়ে দলের কিছু কর্মসূচি রাজপথে পালন করলেও এখন তিনি দলীয় কর্মসূচিও পালন করেন নিজ বাড়ির ৫ তলায়। বিগত সময়ে অনেকটা ঘরে বসে নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে পারলেও এবার আর তিনি সেটি পারবেন না বলে মনে করছেন দলের অনেক নেতাকর্মী।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। ওই নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপিকা নাজমা রহমানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে স্বল্প সময়ের জন্য তিনি আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরই অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম আকরামের কাছে পরাজিত হন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম।

২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়ে এস এম আকরামকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল কালাম। ওয়ান-ইলেভেনের পরে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সংস্কারপন্থি হিসেবে অভিযুক্ত হন। ওই সময়ে তাকে দল থেকে বাদ দিয়ে বিকল্প প্রার্থী দেয়ারও দাবি উঠেছিল। তখন বিশিষ্ট শিল্পপতি বন্দরের জামালউদ্দিন ধানের শীষ প্রতীক পেতে কিছুদিন দৌড়ঝাঁপ করলেও শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালামই। তবে ওই নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নাসিম ওসমানের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। যে কারণে ওই নির্বাচনে প্রার্থী হননি দলের কোন নেতাই। এরপর ওই বছরে ২৬ জুন অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেয়নি। উপ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে সংসদ সদস্য পদে আসীন রয়েছেন জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান।

এদিকে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচবার অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে একপ্রকার একক প্রার্থীই ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। দুই দশকে এই আসনে তার বিকল্প প্রার্থী তেমন কেউই ছিল না বললেই চলে। যে কারণে নানা অভিযোগ সত্ত্বেও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিলেন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। তবে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পেলেও বর্তমান প্রেক্ষাপট ভাবিয়ে তুলেছে অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে। কারণ বিগত দুই যুগেরও বেশী সময়ে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তেমন কেউ ছিলো না।

মাঝখানে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নাম শোনা গেলেও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) ও নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) এই আসন দু’টিতেই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের অবস্থান ছিল। আর তৈমূর পাঁচ আসনের চেয়ে রূপগঞ্জেই প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বেশ সক্রিয় ছিলেন। এদিকে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পরে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় হয়ে ওঠা ভাবনায় ফেলে দিয়েছে সাবেক এমপি কালাম ও তার অনুসারীদের। বিশেষ করে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান গেল বছরের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া বিগত দিনে যারা অ্যাডভোকেট আবুল কালামের বিরোধী মনোভাবাপন্ন ছিলেন তাদের অনেকেই বর্তমানে সাখাওয়াতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের অনুগামী নেতাকর্মীরা। সাখাওয়াতকে ঠেকাতে সম্প্রতি বন্দরে তার উপরে হামলাও করেছে কালাম সমর্থিতরা। তবে এতেও দমে যাননি সাখাওয়াত।

একটু সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। মহানগর যুবদলের আহবায়ক হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন মানুষের সাথে রাজনীতি করে রাজপথে পোড় খাওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ৫ আসনে সাধারণ মানুষের কাছেও খুব চেনা মানুষ খোরশেদ। সাধারণ মানুষের কাছে সবসময়ই তিনি একজন সাদাসিধে মানুষ। সম্প্রতি তার নিজ বলয়ের এবং যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঈদ পুনর্মিলনী ও গণসংযোগ করেছেন, আর  এসকল কারণে সাখাওয়াত ও খোরশেদ বর্তমানে কালামের মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়ে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়:  ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।