ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

খুলনায় বিএনপিতে নতুন মুখের আধিপত্য বেশি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৮
খুলনায় বিএনপিতে নতুন মুখের আধিপত্য বেশি খুলনায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

খুলনা: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসছে বিএনপি। নির্বাচনের জন্য সোমবার (১২ নভেম্বর) থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে দলটি। যা চলবে মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত। যে কারণে মনোনয়ন ফরম কিনতে খুলনার অনেক নেতা ঢাকায় অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে বেশি এগিয়ে নতুন প্রার্থীরা। মনোনয়ন পেতে চলছে চূড়ান্ত লবিং আর গ্রুপিং।

খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এবার অনেক তরুণ নেতা মনোনয়ন পেতে পারেন। ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আসনে নিষ্ক্রিয়, বয়োঃবৃদ্ধ, সাবেক সংসদ সদস্যের বদলে তরুণ পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন মুখ আশা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

মামলা-হামলার শিকার, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এলাকায় সুপরিচিত, সৎ, দক্ষ সংগঠক, নিষ্ঠাবান ও শিক্ষিত তরুণদের দলীয় প্রতীক দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।

তরুণদের কেউ কেউ দলের সর্ব্বোচ্চ পর্যায় থেকে চূড়ান্ত সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব নবীন প্রার্থীরা নীরবে তৃণমূলে শক্ত অবস্থান তৈরি করায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন প্রবীণ অনেক নেতা।

গত দু’বারের বিএনপি দলীয় প্রার্থী খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান এবারও খুলনা-১ আসনে (দাকোপ ও বটিয়াঘাটা) দলের একক প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অনুরূপভাবে খুলনা-২ আসনেও (সদর ও সোনাডাঙ্গা মেট্রো থানা এলাকা) বিএনপির একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

খুলনা-৩ আসনে (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের আধিপত্যের সূর্য ডুবতে বসেছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তারা।

মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এক সময়ের শিল্পাঞ্চলের ডাকশায়ী নেতা কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম। তিনি বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুব্জ হয়ে কর্মী-সমর্থক হারাচ্ছেন। তার সঙ্গে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন আরও তিন নেতা। তারা হলেন-মহানগর বিএনপির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তারেক রহমানের ঘনিষ্ট রকিকুল ইসলাম বকুল এবং মহানগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুর থানা সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠু।

এ আসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার এবং ফেস্টুন সাঁটিয়েছিলেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুল। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে সম্প্রতি স্বতন্ত্র একটা অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি।

তৃণমূল একাধিক নেতা বলছেন, বকুল জিয়া পরিবার তথা তারেক রহমানের খুবই আস্থাভাজন। যে কারণে তরুণ এ নেতা এবার মনোনয়ন পেতে পারেন।

রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসন। এ আসনে এবার নতুন প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল।

অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক শিল্পপতি শরীফ শাহ কামাল তাজ এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

শাহ কামাল তাজ ২০০৮ সালে এ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। পরাজয়ের পর বেশ কয়েক বছর এলাকায় সাংগঠনিক কাজে অংশ নিলেও গত কয়েক বছর খুলনায় তার কোনো তৎপরতা নেই।  যে কারণে আসন্ন নির্বাচনে তাজকে ছাড় দিতে নারাজ আজিজুল বারী হেলালের সমর্থকরা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০০৮ সালে ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচন করে ১ লাখ ১৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন আজিজুল বারী হেলাল। ওই সালে আমরা তাকে তার জন্মস্থানের এ আসনে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন পাইনি। এবার আমরা খুলনা-৪ আসনে তাকেই চাই।

আজিজুল বারী হেলাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দল ও ঐকফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুলনা-৪ আসনে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি আমার আছে। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ সাত দফা এবং তফসিল পেছানো এই আটটি দাবি মেনে নিতে হবে। এখন সব কিছু নির্ভর করছে সরকারের আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার উপর।

ডুমুরিয়া ও ফুলতলা এ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসন। এ আসনে বিএনপি ও নিবন্ধন বাতিল জামায়াতের মধ্যে তৈরি হয়েছে মনোনয়ন নিয়ে দূরত্ব। জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়লাভ করেন। কিন্তু বিএনপি এবার এ আসনটি জামাতকে ছাড় দিতে রাজি নয়। তবে শোনা যাচ্ছে ২০ দলীয় জোট থেকে গোলাম পরওয়ার মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য জামিরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মামুন রহমান ও বিএমএর সাবেক মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. গাজী আবদুল হক এবং ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান আলী মুনসুর।

জনশ্রুতি আছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্টজন ড. মামুন রহমান। যে কারণে তার অনুসারীরা মনে করেন মামুন রহমানই মনোনয়ন পাবেন। লন্ডনে অবস্থানরত ড. মামুন রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াত দুর্বল হয়ে গেছে। এ আসন এবার জামায়াতকে ছাড়তে হবে।

তিনি বলেন, ১৫ মাস দেশে আসতে না পারলেও প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছি। আমার সমর্থকরা দলীয় কর্মসূচি সফল করছে। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে এলাকায় বিএনপির যত নেতা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন তাদের সব খরচ আমি বহন করে আসছি। যে কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে চায়।

সুন্দরবনের কোলঘেঁষা কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৬ আসন গঠিত। এ আসনেও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এ আসনে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস আবারও নির্বাচিত হন। এবার আসনটিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চাইবেন খুলনা মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু বিএনপি আসনটি জামায়াতকে ছাড় দিতে রাজি নয়। বিএনপির দাবি জামায়াতের সেই শক্ত অবস্থান এখন আর নেই।

এ আসনে খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম রফিকুল ইসলাম, কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

মনার সমর্থকরা বলছেন, মনা দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলের দুঃসময়ে, কর্মীদের দুঃসময়ে তিনি পাশে থাকেন। বিগত দিনের সংসদ ও খুলনা সিটি নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাইলেও দেওয়া হয়নি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জোরালো দাবিদার তিনি।  

এস এম শফিকুল আলম মনা বাংলনিউজকে বলেন, অনেক আগেই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে ৬ আসনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। যে কারণে আমার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৮
এমআরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।