চাপাইনবাবগঞ্জ (শিবগঞ্জ) থেকে: আম বাগানগুলোতে বাদামি রঙের ছোট ছোট ব্যাগ ঝুলে আছে। দেখে মনে হবে কোনো কিছু হয়তো লুকিয়ে রাখা।
কিন্তু আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা একাডেমি মোড়ের বাগানগুলোতে প্রবেশ করতেই এমন দৃশ্যের দেখা মিললো। অবাক দৃষ্টিতে দেখা একজনের খটকা ভাঙ্গিয়ে দিলেন বাগান মালিক মো. ইসমাইল খান শামীম।
জানালেন, এটি ফ্রুটিং ব্যাগিং প্রযুক্তি। এই ব্যাগের মধ্য অন্য কিছু নয়, তরতাজা আম রয়েছে। যাবতীয় পোকামাকড়, রোগবালাই’র হাত থেকে রেহাই পেতেই এই ব্যবস্থা। এতে আম আরও ভালো হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে আরও পরিস্কার করলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. মো. শরফ উদ্দিন। তিনি জানান, এই ব্যাগ ব্যবহারে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের ব্যবহার কমবে ৭০ থেকে ৯০ ভাগ। এতে রোগ ও পোকার অস্তিত্ব থাকবে না। আমগুলো সংরক্ষণ করা যাবে ৯ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত। এছাড়া আমের রঙ হলুদ হবে।
এ গবেষক আরও বলেন, গত বছর এই ব্যাগে সফলতা পাওয়ায় চলতি মৌসুমে এর ব্যবহারে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আম রপ্তানিতে যে মূল বাধা ছিল এই ব্যগের আমগুলো ওইসব বাধা দূর করে যে কোনো বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।
শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের ডাগর আমগুলো বাদামী রঙের ব্যাগে ভরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অনেকেই আরও ব্যাগ লাগানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
উপজেলা সদর এলাকার চাষি প্রশান্ত কুমার জানান, এই পদ্ধতিতে সবাই খুবই আশাবাদি। বিশেষ করে মানসম্মত আম উৎপাদনে খুবই ভালো ভূমিকা রাখবে। তিনি প্রায় দুই হাজার আমে ব্যাগ পরিয়েছেন।
দেবীনগর এলাকার চাষি আলাউদ্দিন জানান, আগামী বছর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন তিনি। এ বছর নানা কারণে ব্যবহার করতে পারছেন না। তবে বিষয়টি তার কাছে খুবই ইতিবাচক মনে হয়েছে।
আম গবেষকরা জানান, দেশে অনেক আম উৎপাদন হলেও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হতো না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে আম উৎপাদন করে রপ্তানি করা হয়। ফলে দেশে এই পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে আম রপ্তানির দুয়ার খুলে যাবে।
আঞ্চলিক আম গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সূত্র জানায়, গত বছর (২০১৫)আম রপ্তানি হয় ৮২১ মেট্রিক টন। চলতি বছরে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি বৃদ্ধির কারণে তিন হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশিয় ক্রেতারাও ভালো ও নিরাপদ মানের আম খেতে পারবেন।
গত বছর দেশের ৮ জেলায় ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছিল প্রায় পাঁচ লাখ। চলতি বছর ৩০ লাখের বেশি আমে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তিতে উৎপাদিত এসব আম বিশ্বের যে কোনো দেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।
দীর্ঘ গবেষণার পর এই পদ্ধতি ব্যবহারে সফলতা পাওয়া আম গবেষক ড. শরফ উদ্দিন জানান, এটি একটি কাগজের ব্যগ। বিশেষ ধরনের এই ব্যাগে দুটি আস্তরণ রয়েছে। বাইরের আস্তরণটি বাদামী রঙের, আর ভেতরেরটি কালো রঙের।
যে কোনো জাতের আমকেই রঙিন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে আমের যে রঙের সমস্যা দেখা দিতো তা এই ব্যাগ ব্যবহারে দেখা দেবে না। ইতিমধ্যে চাষিদের মাঝে এই প্রযুক্তিটি ব্যপকভাবে সাড়াও ফেলেছে।
সেলিমাবাদ এলাকার চাষি মো. ইসমাইল খান শামীম বাংলানিউজকে জানান, এক মৌসুমে এই ব্যাগ দুইবার ব্যবহার করা যাবে। প্রথমে আগাম জাতের আমে ব্যবহারের পরে লেট ভ্যারাইটিতে ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি ব্যাগ কিনতে খরচ পড়ছে সাড়ে তিন থেকে চার টাকা। আর লাগানোর খরচ গুণতে হচ্ছে ব্যাগপ্রতি ৫০ পয়সা। তিনি প্রায় ৩০ হাজার আমে ব্যাগ পরিয়েছেন।
প্রথম বছর বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও চলতি বছর চাঁপাই অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেশে তৈরি করে বাজারজাত করছে। ফলে ব্যাগ পেতেও তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না চাষিদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৬
একে/জেডএম