বগুড়া: চলতি মৌসুমে বগুড়ায় প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসাবে প্রায় এক লাখ মেট্রিকটন বীজের প্রয়োজন।
কতিপয় মুনাফালোভী ডিলারের যোগসাজশে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতেই এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিলেই চাহিদা মতো আলুর বীজ মিলছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক চাষি।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
জেলার সর্বত্রই পুরোদমে চলছে আলুর জমি প্রস্তুতির কাজ। অনেক এলাকায় জমি তৈরির কাজ শেষ করেছেন চাষিরা। অনেকেই জমিতে আলু লাগানোর কাজও শেষ করেছেন। তবে বেশিরভাগ চাষি জমি প্রস্তুত করে বসে রয়েছেন। বীজের অভাবে তারা জমিতে রোপণ করতে পারছেন না।
আবু সাঈদ, আব্দুল হান্নান ও মফিজুল ইসলামসহ কয়েকজন আলু চাষি বাংলানিউজকে জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে জমি প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছেন। তবে এখনও বীজ কিনতে পারেননি। জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ডিলারদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। বীজের জন্য তারা হন্যে হয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন।
কিন্তু বীজ ব্যবসায়ীরা তাদের বলছে বীজ এখনো আসেনি। আসলে বীজ পাবেন। কবে আসবে আর কবে পাবো সেই কথাটিও সুনির্দিষ্ট করে বলছেন না ডিলাররা। তবে দাম বেশি দিলেই বীজ মিলছে বলে অভিযোগ করেন এসব চাষীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, জেলার সিংহভাগ ডিলার অগ্রিম টাকা নিয়ে সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছে বীজ বিক্রি করে দিয়েছে। এভাবে চক্রটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। দাম বাড়াতে বাজারে বীজের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে মহাবিপাকে পড়েছেন আলু চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৬১ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি জমিতে দেড় মেট্রিকটন বীজের প্রয়োজন। এ হিসাবে জেলায় ৯২ হাজার ৮শ ৫০ মেট্রিকটন বীজের চাহিদা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, আপতত বীজের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে। তবে এ সঙ্কট থাকবে না। কারণ, জেলার অনেক চাষি হিমাগারে নিজের প্রয়োজন মতো বীজ রেখেছেন।
অন্য জেলা শহর থেকে এখানে বীজ আসবে। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনসহ (বিএডিসি) বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির বীজ বাজারে রয়েছে। সবমিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে সিন্ডিকেট ও বাড়তি দামের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান কৃষি বিভাগের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম সারওয়ার বাংলানিউজকে জানান, বিএডিসি’র অধীনে বগুড়া অঞ্চলে ৩শ ৭২ জন ডিলার রয়েছেন। বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার জন্য আট হাজার মেট্রিকটন আলুর বীজের চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। বরাদ্দ এসেছে তিন হাজার ১শ মেট্রিকটন।
দামের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বিএডিসি’র গ্রানুলা জাতের এ গ্রেডের প্রতিকেজি বীজ ২৪ টাকা ও বি গ্রেড ২৩ টাকা এবং অ্যাস্টিরিক জাতের এ গ্রেডের প্রতিকেজি বীজ ৩০ টাকা ও বি গ্রেডের দাম ২৮ টাকায় চাষিরা কিনতে পারবেন।
নির্ধারিত এ দামের চেয়ে বাড়তি মূল্যে কোনো ডিলার বীজ বিক্রি করলে জেলা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। সেক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। দায়ী ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করবেন বলে যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
আর বীজ সঙ্কটের ব্যাপারে বিএডিসি’র উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম সারওয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিমের মতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
এমবিএইচ/আরআইএস/এসএনএস