ভাল উর্বরতা থাকলে মাটি ভাল ফসল উপহার দেবে। আর উর্বরতা হ্রাস পেলে ফসল ভাল হবে না।
কিন্তু জেনে-বুঝেও নিজের পায়ে কোপ মারছেন বগুড়ার জমি মালিকরা। কাঁচা অর্থের লোভে জমির এক বা একাধিক ফুট মাটি কেটে তা বেচে দিচ্ছেন ইটভাটায়। আক্ষেপ করে এ বিষয়েই কথা বললেন কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রহিম।
চারপাশ ঘিরে ফসলি জমি। মাঝখানে কিছু ফাঁকা জমি। যে জমিতে চলতি মৌসুমের ফসল লাগানো হয়নি। সেই জমিতে চলছে উপর্যুপরি কোদালের কোপ। মাটির উপরিভাগ কেটে ভরা হচ্ছে ট্রাকে। নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এমন অনেক জায়গায়ই মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে জলাশয়।
আব্দুর রহিম মনে করেন, এভাবে মাটি কাটার ফলে আশঙ্কাজনকহারে কমছে ফসলি জমি। কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি। ফসলের ফলনেও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মাটিখেকো চক্রের দৌরাত্ম্য কমছে না। নগদ লাভের আশায় জমির মালিকরা মাটিখেকোদের কাছে ফসলি জমি তুলে দিচ্ছেন।
বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চল ঘুরে বাংলানিউজের ক্যামেরায় উঠে আসে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার এমন চিত্র।
ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলেও এক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে মাটি ব্যবসায়ীরা ইটখোলার মালিকদের সঙ্গে অনেকটা জোট বেঁধে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন এ কার্যক্রম।
জেলার শেরপুর উপজেলার বোংগা ও কালসিমাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি প্রভাবশালী চক্র গ্রাম দু’টিতে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। লোভ লালসা দেখিয়ে কৃষকদের হাতে কিছু টাকা গুজিয়ে দিয়ে চক্রটি এ কাজ করছে।
গভীরভাবে মাটি কেটে তা বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। কোদাল ছাড়াও মাটি কাটতে অনেক ক্ষেত্রে মেশিন (ভ্যাকু) ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পাশের ফসলি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাঁচা সড়কও। কিন্তু মাটিখেকোদের থামতে পারছে না কেউ।
পাশের নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, বগুড়া সদর, গাবতলী, শিবগঞ্জসহ প্রায় সবগুলো উপজেলায় কম-বেশি এমন চিত্র দেখা যায়।
জামাল ফকির, আব্বাস উদ্দিন, মোহর আলীসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, মাটিখেকোরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। এদের বিরুদ্ধে কিছুই বলা যায় না। প্রতিবাদ করলেই মামলা-হামলার ভয় দেখায় ওরা। তাই নীরবে চক্রটির অন্যায় কার্যক্রম সহ্য করতে হয়। মাটি ব্যবসায়ী মমতাজ, কামরুল, জহুরুল বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমাদের ব্যবসা। টাকার বিনিময়ে মাটি কিনি। আবার টাকার বিনিময়ে ইটভাটার মালিকদের কাছে সেই মাটি বিক্রি করি। পুরো জেলায় আমাদের মত অনেকেই এ ব্যবসা করেন। তাই আইন মেনে সবকিছু হয় না।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগ থেকে মাটি কাটা হলে সেই জমির উর্বরতা শক্তি থাকে না বললেই চলে।
সেই জমি আগের অবস্থায় আসতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে জমিতে প্রত্যেক বছর প্রচুর পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া জমিতে পলি মাটি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এটা কৃষির জন্য মোটেই সুখকর বিষয় নয়।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে। এক্ষেত্রে সরকারি নিয়মনীতি যথাযথভাবে প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের এখনই উদ্যোগে নিতে হবে। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে সব সময় কৃষকদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি না করতে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
এমবিএইচ/এইচএ/