এতে একদিকে, যেমন বেকারত্ব দূর হচ্ছে, অন্যদিকে, আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানালেন, অন্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি লাভ পাচ্ছেন ক্যাপসিকাম চাষ করে।
ভোলা থেকে এসব ক্যাপসিকাম ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়।
জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে ভোলা সদরের বিচ্ছিন্ন জনপদ মাঝের চরে। সেখানে অর্ধশতাধিক চাষি ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্যাপসিকাম চাষ বেড়েছে অনেক বেশি।
মাঝের চর ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফসলের ক্ষেতের পরিচর্যা, তোলা আর আগাছা দমনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঝের চরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে সবজির সমারোহ। রোগ ও পোকার আক্রমণ ছাড়াই চলতি মৌসুমে সেখানে অন্য ফসলের চেয়ে উন্নত জাতের ক্যাপসিকাম’র ব্যাপক আবাদ হয়েছে।
ক্যাপসিকাম চাষি আবুল কাসেম বলেন, গত বছর ক্যাপসিকাম চাষ করে লাভবান হয়েছি। এ বছর চার একর জমিতে চাষাবাদ করেছি, ফলন অনেক ভালো, আশা করি ২০ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে পারবো এবার।
চাষি নয়ন ও নিজাম উদ্দিন বলেন, গত দুই বছর ধরে মাঝের চরে ক্যাপসিকাম আবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা কম হলেও ঢাকার বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। বড় বড় রেস্টুরেন্টে পিজা, ফ্রাইড রাইস, স্যুপ, পাস্তা ও সবজিসহ বিভিন্ন খাবারে ক্যাপসিকাম ব্যবহৃত হয়।
তছির বলেন, তারা দেশি মরিচের চাষ করে তেমন লাভ করতে পারেননি। পরে ক্যাপসিকাম চাষ করে আশপাশের অনেকেই লাভবান হওয়ায় তিনিও এবার এই সবজি চাষ করছেনে।
মাঝের চরের জমি উর্বর হওয়ায় ক্যাপসিকাম’র ফলন ভালো হয় বলেও মনে করেন তিনি।
মাঝের চরের অর্ধশতাধিক ক্যাপসিকাম চাষির মধ্যে কৃষক নিজাম দুই একর, ছিদ্দিক দেড় একর, নয়ন দুই একর, তছির চার একর, নাগর দুই একর, মজিবুর এক একর, ফারুক এক একর ও সেলিম এক একর জমিতে ক্যাপসিকাম আবাদ করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মেঘনা বিধৌত মাঝের চরের মাটি অত্যন্ত উর্বর, তাই দুই-তিন বছর ধরে কৃষকরা ক্যাপসিকাম চাষ করে ভালো ফল পাচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে দিন দিন আবাদ বাড়ছে। গত বছর জেলায় দুই হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ হয়। এবার তা বেড়ে পাঁচ হেক্টর হয়েছে।
কৃষকরা জানান, প্রতি বছরের অগ্রহায়ন মাসে ক্যাপসিকাম আবাদ করা হয় এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি ফসল তোলা হয়। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
ভোলা থেকে ঢাকার নিউ মার্কেট, কারওয়ান বাজার ও উত্তরায় ক্যাপসিকাম কেনা-বেচা হয়। বীজ সংগ্রহ করা হয় গুলিস্তানের ছিদ্দিক মার্কেট থেকে। ক্যাপসিকাম চাষে একর প্রতি ২৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। এতে খরচ পড়ে তিন লাখ টাকা। উৎপাদন হয় সাত-আট টন। বীজ সংগ্রহের পর চারা তৈরি করতে হয়। এক মাস পর সেই চারা রোপণ করতে হয়। এ বীজের দামে ভিন্নতা রয়েছে। তবে ভোলায় দেড় লাখ টাকা কেজি দরের বীজ বিক্রি হয়। এ বীজকে বলা হয় চায়না বীজ। এর চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য জাতের মরিচের মতোই। সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে ক্যাপসিকাম’র কদর বাড়ছে দিন দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
এসআই