এতে লক্ষ্মীপুরের হাজার-হাজার কৃষক পড়েছেন বিপাকে। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা তাদের।
এ সমস্যার কথা বার বার লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে জানানো হলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটের মেঘনা নদী সংলগ্ন রহমতখালী খালের ওপর নেভিগেশন লকসহ ১৪ ভেন্টের দুইটি রেগুলেটর রয়েছে। এতে মোট ২৮টি গেট আছে। মূল রেগুলেটরের ১৪ গেটের মধ্যে পাঁচটি জোয়ারের সময় খুলে দেয়া হয়। বাকি নয়টি গেটের মধ্যে একটির চেইন বিকল; বাকি আটটি বৈদ্যুতিক লাইন ও মোটরের ত্রুটির কারণে বন্ধ।
পুরনো রেগুলেটরের ১৪টি গেটই বন্ধ। এর মধ্যে তিনটি ভেঙে গেছে। যে কারণে ভাটার সময় মূল রেগুলেটরের সচল গেটগুলো বন্ধ করলেও পানি ফের নদীতে ঢুকে পড়ে। এতে নদীর জোয়ারের পানি আশেপাশের খালে পৌঁছুতে পারছে না। ফলে পানির অভাবে জমিতে লাঙল দিতে পারছেন না কৃষকেরা। এছাড়া সয়াবিন ও শাক-সবজি ক্ষেতেও সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুইটি রেগুলেটরের জন্য কোনো গেট অপারেটর নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের একজন এমএলএস দীর্ঘদিন ধরে গেট অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। তার একার পক্ষে জোয়ার এলে গেট খোলা ও ভাটার সময় বন্ধ করা সম্ভব হয় না। জানা গেছে, রেগুলেটরের প্লাব গেটে মোটর নেই; চেইনকপ্পা দিয়ে গেট উঠা-নামা করাতে হয়। কিন্তু এ কাজে নির্দিষ্ট লোকবল না থাকায় শ্রমিক এনে গেট উঠাতে ও নামাতে হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক এনে তা করছে না। এছাড়া বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি ও রেডিয়েল গেট উঠা-নামার মোটর বিকল হলে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও মেরামত করা হয় না বলে অভিযোগ কৃষকদের। অযত্ন, অবেহলা ও লোকবল সংকটের কারণে একের পর এক গেট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের হাজার হাজার কৃষক। ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেগুলেটরের দুই পাশের গেটের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। এক পাশের নাম রেডিয়েল গেট, অন্য পাশের নাম প্লাব গেট। রেডিয়েল গেট বৈদ্যুতিক আর প্লাব গেই চেইন বিশিষ্ট।
কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেন্সের তোরাবঞ্জ এলাকা ও পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার ভবনীগঞ্জের চর উভুতি ঘুরে দেখা গেছে, খালে পানি নেই। শুকিয়ে আছে খাল। বোরো রোপণ করতে পারছেন না বেশিরভাগ কৃষক। কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে পুকুর-দীঘি থেকে পানি নিয়ে চারা রোপণের চেষ্টা করছেন।
কৃষকরা জানান, বোরো মৌসুমে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার আগে-পরে চার থেকে পাঁচদিন জোয়ার আসে। ওই জোয়ারের পানি খালে ঢুকলে সে পানি পাম্প দিয়ে ক্ষেতে দেয়া হয়। কিন্তু সবগুলো গেট খোলা না থাকায় পানি খালে পৌঁছায় না। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর, কালির চর, চর উভুতি, ভবানীগঞ্জ, জকসিন, মিরিকপুর, উত্তর জয়পুর, দত্তপাড়া, তেওয়ারীগঞ্জ, কুশাখালীসহ জেলার পূর্বাঞ্চল এবং কমলনগর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষক নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও বোরো আবাদ করতে পারছেন না। যারা বিকল্প উপায়ে রোপণ করেছেন তারাও সেচ না দিতে পেরে বিপাকে রয়েছেন।
কৃষকরা জানান, মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে জমিতে ধানের চারা রোপণের কথা থাকলেও এখনো (১৮ ফাল্গুন) চারা রোপণ করা যায়নি। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চারা বীজতলাতেই কুশি ছেড়েছে। যে কারণে ওইসব চারা আর রোপণ করা যাচ্ছে না।
উত্তর লরেন্স কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও সেচ মালিক- আবদুল গণি জানান, পানি না পেয়ে কৃষকরা হাহাকার করছেন। পানির অভাব না মিটলে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বেন।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। বিষয়গুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ২৭ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান কৃষক।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৭
এসআই