তাই অনেক আবাদী জমি বিনা চাষে পড়ে থাকছে, পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও ছাদে সবজি চাষে তেমন কোনো সাফল্যের কথাও শোনা যায় না এ অঞ্চলে।
চাষিরা বলছেন, মেট্রোপলিটনের আওতাভুক্ত হওয়ার আগে যখন এটি উপজেলা কিংবা ইউনিয়নের আওতায় ছিল তখন বীজ থেকে শুরু করে সরকারি সব সুযোগ সুবিধাই পেয়েছেন তারা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও কৃষক গিয়াস উদ্দিন লিটু বলেন, তিনি তার বাড়ির আশপাশে থাকা উঁচু জমিতে কানিয়া তরমুজ (ভেতর হলুদ), পেয়ারা, বড়ই, সিম, করোল্লা, বরবটি, লাউসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকেন।
বছরের বেশির ভাগ সময় এখানকার জমিতে পানি থাকায় এখানে শুধু বোরো মৌসুমে ধান চাষ করা সম্ভব হয়, তাতে তেমন লাভ না হওয়ায় অনেকেই ধান চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন কেউবা জমিই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
তবে তিনি তার জমিতে কচুরিপানার ভাসমান ধাপের ওপর ফসল ফলানোর চিন্তা করলেও কৃষি অফিসের সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় বার বার পিছিয়ে পড়ছেন।
তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ বা চারা পেলে তাদের খরচ অনেকটাই কমে যেত, কিন্তু মেট্রোপলিটন এলাকার আওতাভুক্ত হওয়ার পর থেকে এসব কিছুই তারা পান না।
কৃষক মজিদ মিয়া জানান, মেট্রোপলিটন এলাকায় জমির কর, বাড়ির কর থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্যই বেশি টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি মেট্রো এলাকায় খালগুলো সংস্কারের অভাবে সঠিক সময়ে সেচ দেওয়াও যায় না, তেমনি নিচু জমির পানি নামাতেও কষ্ট হয়।
তিনি আরো বলেন, আবার সেচের জন্য গভীর নলকূপ প্রয়োজন হলেও সিটি এলাকায় তা বসাতে দিচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন। এখানে কৃষি কর্মকর্তারা এসে পরামর্শ ছাড়া কোন ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
এদিকে, মেট্রোপলিটন এলাকা শহর কেন্দ্রীক হওয়ায় এসব অঞ্চলে বহুতল ভবনের ছাদে ও পতিত জমিতেও আবাদ করে থাকেন অনেকে। তাদের অভিযোগও একই রকমের। পাশাপাশি নিয়মিত প্রচার ও প্রদর্শনীর অভাবে আধুনিক রুচিশীল ফসল উৎপাদনে যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় এক, দুই ও তিন ফসলি জমি রয়েছে ৪২৫৫ হেক্টর এবং মোট কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৪৮৭০ জন। তবে এর বাইরেও ছাদের ওপর খেত করা চাষি রয়েছে।
অথচ বরিশাল মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসে ১৩টি পদের অনুকুলে ১ জন কৃষি কর্মকর্তা, ১ জন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা, ৪ জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ১ জন হেডক্লার্ক ও ৩ জন অফিস সহকারীসহ ১০ জন রয়েছেন। এ কার্যালয়ে চেয়ার-টেবিল ও নামে মাত্র একটি কম্পিউটার থাকলেও মাঠ থেকে অফিস পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তার জন্য নেই কোনো যানবাহন।
কর্মকর্তারা জানান, নিজেদের খরচে যানবাহন ব্যবহার করে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া, মাঠ দিবস পালন করার কাজটি করছেন তারা। তবে খালি হাতে কৃষকদের কাছে গিয়ে অবহেলামূলক কথা শোনা ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছেন না তারা।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের কর্মকর্তা মোসা. ফাহিমা হক বলেন, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি তাদের অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন তারা কৃষকদের বিভিন্ন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
যানবাহন না থাকলেও তারা নিজ খরচে সব করছেন, মাঠ দিবস নিয়মিত করা হয়। শহর কেন্দ্রীক এ অফিসের কার্যক্রমের মধ্যে ছাদে খেত বা গাছ লাগানোর বিষয়টি অতি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়ে থাকে। পাশাপাশি নিচু জমিতে কান্দি করে বহুজাতিক ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৭
এমএস/আরএ