কৃষকরা বিঘা প্রতি জমিতে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পেঁয়াজের চাষ করে এখন বিক্রিও করছেন একই দামে। কৃষকরা প্রতি মণ পেঁয়াজ ফড়িয়াদের কাছে ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি করছেন।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে মুজিবনগর উপজেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১১শ’ ৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোফাকখারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পার হেক্টর জমিতের ৩৬ থেকে ৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।
তিনি জানান, বাজার দর ভালো পেলে এ জাতের পেঁয়াজের চাষ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেত। প্রায় ১৫ বছর থেকে মুজিবনগরে উচ্চ ফলনশীল সুখ সাগর পেঁয়াজের চাষ হয়ে আসছে। মুজিবনগরের কয়েকজন কৃষক পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে সুখ সাগর পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছিলেন। পরে ফলন লাভজনক হওয়ায় এলাকার বিভিন্ন কৃষকরা নিজেরাই সুখ সাগর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে চাষটি এলাকায় ছড়িয়ে দেন। উপজেলায় এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে অনেকেই তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।
উপজেলার মানিকনগর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রেজাউল হক, আবু সাঈদ, আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার কৃষকরা মহাজন ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। পেঁয়াজের ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।
রেজাউল হক আরো জানান, গত বছর দু’দফা শিলাবৃষ্টির আঘাতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিলো পেঁয়াজের। চাষিরা গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে এ বছর অনেক বেশি এলাকায় পেঁয়াজের চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুইশ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। যার কারণে এ এলাকায় এ জাতের পেঁয়াজের চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে তিন হাজার একত্রিশ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের সুখ সাগর পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে। দেশি তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজের থেকে তিনগুণ বেশি ফলন পাওয়া যায় এ জাতের পেঁয়াজ থেকে। যার হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৬০ থেকে ৭০ টন।
মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জের পেঁয়াজ চাষি আসাদুল হক জানান, মুজিবনগর এলাকার পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় হলেই ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে আমদানিকারকেরা। ফলে বাজার দর কমতে কমতে একেবারেই নিচে নেমে যায়। তখন কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষিদের খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হয়। অথচ মাত্র দুই মাসের মত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখলে চাষিরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি ভোক্তারাও একেবারে অল্প দামে না হলেও সহনীয় দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
ভবানীপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি এসকেন আলী ও হাবিবুর রহমান জানালেন, বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ২১০ টাকা টাকা দরে। অথচ এক বিঘা পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ৫শ’ টাকা বাজার দর পেলেই কৃষকেরা এক বিঘা পেঁয়াজ বিক্রি করে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পেতে পারে। কারণ এ পেঁয়াজের ফলন ভাল। তাই কৃষকদের পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
গোপালনগর গ্রামের এরশাদ আলী, শীবপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ, আনন্দবাস গ্রামের হামিদ মাস্টার জানান, এলাকায় উৎপাদিত সুখ সাগর পেঁয়াজ জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে চিটাগাং, ফরিদপুর, ঢাকা খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ফড়িয়াদের সাহায্যে এ উপজেলা থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই এ উপজেলা থেকে শতাধিক ট্রাক পেঁয়াজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
মুজিবনগরের পেঁয়াজ চাষিরা দাবি সরকার স্থানীয় পেঁয়াজ চাষিদের কাছ থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করবে এবং যখন পেঁয়াজ উত্তোলন করা হবে তখন কিছুদিনের জন্য হলেও ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ০৭ মার্চ, ২০১৭
আরএ