ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বালুচরে মিষ্টি কুমড়া যেন কৃষকের সোনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৭
বালুচরে মিষ্টি কুমড়া যেন কৃষকের সোনা বালুচরে মিষ্টি কুমড়া যেন কৃষকের সোনা

লালমনিরহাট: চাষ করতে জানলে বালুচরেও সোনার ফসল ফলানো সম্ভব। কথাটি প্রমাণ করলেন লালমনিরহাটের তিস্তা চরের চাষিরা।

বন্যা, খরা আর নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে নিত্য লড়াই করেই বেঁচে থাকতে হয় তিস্তাপাড়ের মানুষদের। বিগত বন্যা আর নদী ভাঙনের কবলে তিস্তাপাড়ের মানুষ সম্পদ হারালেও মনোবল হারায়নি।

বন্যার পানি নামার পর জমি জেগে ওঠে ঠিকই। কিন্তু তা ধু ধু বালুচর। চাষাবাদের অনুপযোগী হওয়ায় চরে জমি অনাবাদি থেকে যায়। ফলে অভাব নামক দানবটি তাদের কুঁড়ে ঘর ছাড়ে না। এ অভাব নামক দানবটির সঙ্গে লড়াই করেই বেঁচে থাকতে হয় তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

একপর্যায়ে বেঁচে থাকার তাগিদে বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করেন চাষিরা। কঠোর পরিশ্রম করে অনেকেই পেয়েছেন ভালো ফলন। তাদের ঘর ছেড়েছে অভাব।

চাষিরা জানান, বালুচরে গর্ত করে আবর্জনা ফেলে সেই গর্তে একটি মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়। এরপর প্রয়োজন মতো সেচ দিলে কিছুদিনের মধ্যেই বড় বড় মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। তবে সেচ দেয়াটাই কষ্টের। দূর থেকে কলসি ভরে পানি এনে মিষ্টি কুমড়ার গাছের গোড়া ভিজিয়ে রাখতে হয়। এভাবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে অনেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। সংসারে অভাব কেটেছে অনেকের।

হাতিবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর গ্রামের চাষি আব্দুল বাসেদ এবার তিস্তার বালুচরের ৪০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। কঠোর পরিশ্রম করে প্রতিদিন পানি সেচ দিয়ে সতেজ রেখেছেন সন্তানতুল্য ফসলের ক্ষেত।

বাসেদ জানান, ৪০ শতাংশ জমিতে কুমড়া চাষ করতে তার খরচ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ পর্যন্ত কুমড়া ঘরে তুলেছেন ২২৪টি। এখনো জমি রয়েছে ১৭৯টি কুমড়া। এবার তার ঘরে মোট কুমড়া আসবে ৩০২টি। বর্তমানে দাম কম হওয়ায় সেগুলো বিক্রি না করে রেখে দিচ্ছেন রমজান মাসের জন্য। তখন প্রতিটি কুমড়া ৫০ টাকা দরে বিক্রি করলেও মোট ১৫ হাজার টাকা আসবে। তাতে খরচ বাদে লাভ হবে সাড়ে ১১ হাজার টাকা।

বালুচরে মিষ্টি কুমড়া যেন কৃষকের সোনা

একই এলাকার চাষি মোকছেদ আলী জানান, ২৩ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে এবার ভালোই লাভবান হয়েছেন তিনি। যদি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেতাম তাহলে আরো ভালো ফলন হতো।

মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা থাকায় বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই উল্লেখ করে গোবর্দ্ধন চরের চাষি মফিজ উদ্দিন ও আজিজার রহমান জানান, পাইকাররা সরাসরি চরে এসে নগদ দামেই এসব মিষ্টি কুমড়া কিনে নেন। যা পরে রাজধানীসহ সারাদেশে সরবরাহ করেন তারা।

চরাঞ্চলের কৃষি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাসোড সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার বুকে প্রায় ২০টিরও বেশি চর জেগে উঠেছে। এসব চরে প্রায় সাত শতাধিক চাষি ২৬৫ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩৪৭ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। যা থেকে আট হাজার ৩২৮ মেট্রিকটন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষণ রায় জানান, চরাঞ্চলে এ বছর মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিরা লাভবান হয়েছেন।

চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি বাঙ্গি, বাদামসহ বেশকিছু অর্থকরী ফসল চাষ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।