আমের দেশের মানুষ আপনি, সাতক্ষীরায় এসেছেন আমের ব্যবসা করতে? এমন প্রশ্নের উত্তরে, মুচকি হেসে বলেন, ‘সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। সাতক্ষীরায় শেষ হলে রাজশাহীতে আম ভাঙার সময় শুরু হয়।
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের আমের আড়তে গেলে চোখে পড়ে এই দৃশ্য। ভ্যানে করে ঝুড়ি ঝুড়ি আম নিয়ে আসছেন চাষিরা। ক্যারেট ভর্তি করছেন কেউ কেউ। কেউবা ব্যস্ত ট্রাক লোডে।
আর লোড করা ট্রাক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বরাবরের মতো এবারও সবার আগে বাজারে উঠেছে সাতক্ষীরার আম।
তবে, শুধু দেশের বিভিন্ন জেলায় নয়, ১৫ মের পর থেকে প্রতিবারের মতো এবারও ইউরোপের বাজারে যাবে সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম।
সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, মল্লিকা, সিঁদুররাঙা, ফজলি, কাঁচামিঠা, বোম্বাই ও লতাবোম্বাই উল্লেখযোগ্য।
এর মধ্যে ইতোমধ্যে বাজারে উঠেছে গোবিন্দভোগ। যা বর্তমানে পাইকারি বাজারে ২২শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কিছু কিছু আড়তে হিমসাগর উঠলেও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় তা বাজারে উঠতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে হিমসাগর ও ২৫ তারিখের পর থেকে ল্যাংড়া ভাঙা শুরু হবে। যদিও অনেক বাগানে হিমসাগর ভাঙার সময় হয়েছে। কিন্তু ১৫ মের আগে হিমসাগর ভাঙতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ঠিক একইভাবে ১৫ মের পর থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কোয়ারেন্টাইন বিভাগ, বাংলাদেশ ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইসলাম এন্টারপ্রাইজ ও দীপ ইন্টারন্যাশনাল, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ও এফএওসহ সংশ্লিষ্ট চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ৫০ হাজার মেট্টিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া রপ্তানির লক্ষ্যে জেলার কলারোয়া উপজেলার ১০০টি, দেবহাটা উপজেলার ৪০টি, তালা উপজেলার ৮৭টি ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৫০টিসহ সর্বমোট ৩৭৭টি বাগান নির্বাচন করে বিশেষ পরিচর্চা করা হচ্ছে। এসব বাগানে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলছে বিষমুক্ত আম উৎপাদনের কার্যক্রম।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম গুণে, মানে ও স্বাদে অনন্য। এছাড়া মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে এখানকার বাগানের আম অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক আগে পাকে। তাই এর কদরও বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, আমে যাতে কেউ কেমিক্যাল না মেশায়, সেজন্য আম ভাঙার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর আম ভাঙলে তা পাকাতে কেমিক্যালস দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা এখন আমের ব্র্যান্ড। বিদেশে রপ্তানিসহ রাজধানীর বড় বড় শপিং মলে ব্র্যান্ডিং করে সাতক্ষীরার আম বিক্রি হয়। এবারও হবে। এজন্য প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
জেডএম/