‘ধান ও গমে ব্লাস্ট রোগ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ব্লাস্ট রোগের প্রতিরোধের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ব্লাস্ট রোগের করণীয় সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এতে ধান ও গমের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান কৃষিবিদরা। বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতে বেশি আক্রমণ হয়েছে।
এবার আট জেলায় ধানে এবং নয় জেলায় গমে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) চৈতন্য কুমার দাস।
তিনি জানান, ৭-১০ মার্চ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বাতাসের আদ্রতা বৃদ্ধি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি কারণে ব্লাস রোগের আক্রমণ হয়েছে। কারণ এ রোগ এরকম আবহাওয়ায় দ্রুত বিস্তার করে।
একই জাত বার বার চাষ না করা, ব্রি-২৮ ধানের পরিবর্তে রোগ সহনীয় জাতের চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন এ কৃষিবিদ।
এছাড়া স্বর্ণা সাব ওয়ান জাতের ১৮ দিনের চারা রোপন, ব্রি-৫১ ও সাহাবাজি (ব্রি-৫৬) ধান চাষের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আর গমের ক্ষেত্রে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-২৯, বারি-৩০ চাষ এবং একই জাত ১০ বছরের বেশি চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন চৈতন্য কুমার দাস।
বাংলাদেশ দান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ড. আব্দুল লতিফ প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান, ব্লাস্ট রোগ ৫-৭ দিনের মধ্যে দ্রুত সাইকেল পরিবর্তন করে। ৭২-৮৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরো ক্ষেত নষ্ট করে দেয়। তখন কৃষকের কিছু করার থাকে না।
জাতের পরিবর্তনের পাশাপাশি শোধন করে বীজ বপন এবং বিভিন্ন জাতে উদ্ভাবন করে চাষের পরামর্শ দিয়েছেন আব্দুল লতিফ।
গমের ব্লাস্ট ধানে এবং ধানের ব্লাস্ট রোগ গমে আক্রমণ করে না বলেও জানান ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই গবেষক।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, এবার রাতের তাপমাত্র কম, দিনের তাপমাত্রা বেশি, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে আক্রমণ বেড়েছে।
একই এলাকায় একই জাত বার বার চাষ না করা, ব্রি-২৮ জাতের ধানের পরিবর্তে ব্রি-৫৮ বা রোগ প্রতিরোধকারী জাতের চাষ করার পরামর্শ দেন।
এছাড়া বোরো ধানের পরিবর্তে ডাল জাতীয় উদ্ভিদ চাষের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কোনো ক্ষেত্রে দানের চেয়ে ডালে লাভ বেশি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. বাহাদুর মিয়া ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ এবং গবেষণার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দেন।
কৃষিসচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে গবেষক এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ