কিন্তু সবজির এ বাম্পার ফলনের জন্য প্রতিনিয়তই ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত কীটনাশকের। এ বিষয়টিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের কোনো প্রকারের নজরদারি নেই বলে অভিযোগ একাধিক চাষির।
সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা এলাকার সবজি চাষি কামরুল ইসলাম (৪০)। চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে বেগুন, এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়স ও আধ বিঘা জমিতে পুঁই শাকের চাষ করেছেন। এতে প্রতিটি জমির ফলন থেকেই বেশ লাভবান তিনি।
তবে জমিতে প্রচুর পরিমাণে সার ও বিষ প্রয়োগ করতে হয় বলে মন্তব্য তার। তবে কোন জমিতে কি পরিমাণ সার ও বিষ প্রয়োগ করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলানিউজকে জানান, সারের দোকানে গিয়ে জমির পরিমাণ ও ফসলের নাম বললেই তারা সার ও বিষ দিয়ে দেন। এভাবেই একযুগ ধরে সবজির চাষ করে আসছেন তিনি। একই এলাকার সবজি চাষি আব্দুল করিমের ছেলে ফরিদ হোসেন (২৬) বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে ২৬ শতাংশ জমিতে ঝিঙার চাষ করেছেন তিনি। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ৩৮ হাজার টাকার মতো। আরও প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো ঝিঙা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। সে কারণে নিয়মিতভাবে সবজির ক্ষেত পোকার হাত থেকে রক্ষায় ডাইমেথিন, অধিক ফলনের আশায় ভিটামিন ফ্লোড়া, রোগবালাই প্রতিরোধকের ডায়ামেথিন এন এবং গাছ বেড়ে ওঠার জন্য কনকিডর কীটনাশক ব্যবহার করেন। এসব বিষয়ে নিয়মিতভাবে সারের দোকানদারদের পরামর্শ নেন তিনি।
একই ইউনিয়নের পণ্ডিত আলীর ছেলে আব্দুল হালিম (৫০) বাংলানিউজকে জানান, প্রায় এক বিঘা জমিতে ধুন্দলের চাষ করেছেন তিনি। বাজার দর ভালো থাকায় বেশ লাভবান তিনি। সবজির ক্ষেতে বিভিন্ন সময়ে টিএসপি, ইউরিয়া, দস্তা, ম্যালাথিয়ন ও কনকিডর নামের কীটনাশক ব্যবহার করেন তিনি। প্রায় দুই ২০ বছর ধরে সবজির চাষ করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো দিন তার ক্ষেত ও আশেপাশের কোনো এলাকায় কৃষি কর্মকর্তার দেখা পাননি বলেও মন্তব্য তার।
সবজি চাষি নুরল ইসলামের স্ত্রী ঝর্না বেগম বাংলানিউজকে জানান, নিয়মিতভাবে সবজির ক্ষেতে সার ও কীটনাশক না দিলে প্রচুর পরিমাণে পোকার আক্রমণ হয় এবং ফলনের পরিমাণও কম হয়। তাই একটু বেশি টাকা খরচ করে হলেও নিয়মিতভাবে সবজির ক্ষেতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করেন বলে জানান।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ এমদাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে সাটুরিয়া উপজেলায় ৫৮৭ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। অধিক ফলনের আশায় চাষিরা অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার করে থাকেন।
ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার না করে চাষিদের নিয়মিতভাবে জৈব সার ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে এসব বিষয়ে পরার্মশ দেয়ার জন্য নিয়মিতভাবে তাদের লোকজন সবজিসহ সব প্রকারের কৃষি জমি পরিদর্শন করেন। কৃষি কর্মকর্তাদের বিষয়ে চাষিদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে জানান, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা সবজি নিয়মিতভাবে খাওয়ার ফলে লিভার, কিডনি ও এসিডিটি সমস্যা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
আরবি/এসএইচ