অন্যদিকে বাজারে গিয়ে কৃষকদের বিক্রয়মূল্য থেকে দুই-তিনগুণ বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। জেলা বিপণন অধিদফতর বলছে, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পেতে নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ।
সরেজমিনে জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকূপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, হরিণাকুণ্ডু, মহেশপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত হচ্ছে, শসা, পটল, ঝিঙে, বেগুনসহ নানা ধরনের সবজি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওইসব এলাকার কৃষকরা। আর মুনাফা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে। কৃষকরা যে শসা ৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন, সেই শসা ভোক্তারা কিনছেন ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে। ১০ টাকা কেজি দরে কৃষকের বিক্রি করা বেগুন ভোক্তারা কিনছেন ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে।
শৈলকূপা উপজেলার চড়িয়ারবিল, শেখপাড়া, গাড়াগঞ্জ ও ভাটই এলাকার কৃষকদের ক্ষেত ও বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কলা, পটল ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। অথচ জেলা শহরের পুরনো হাটখোলা, নতুন হাটখোলা, তহ্বাজার, হামদহ, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যাড, আরাপপুরে একই সবজি বিক্রি হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের লাভ বেশি হচ্ছে উৎপাদনকারী কৃষকদের চেয়ে। কৃষকদের হাত থেকে ফড়িয়া, ফড়িয়া থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত থেকে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যাওয়ার পর সবজির মূল্য ৩ গুণ বেশি হচ্ছে।
শৈলকূপা উপজেলার দুধসর গ্রামের কৃষক লাল্টু সর্দার জানান, তিনি এ বছর ২২ কাঠা জমিতে শসার আবাদ করেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে ৫ টাকা ও ৭ টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করছেন। ২২ কাঠা জমিতে শসা আবাদ করতে তার খরচ হয়েছিল প্রায় ১২ হাজার টাকা। এখন লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকাও উঠছে না।
একই গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, অন্যদের দেখে তিনি এ বছর শসার আবাদ করেছেন। লাভের আশায় চাষ করা শসা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। কোনোমতে খরচ উঠাতে পারলে আগামী বছর অন্য সবজির চাষ করবেন।
উপজেলার কৃষক রজব আলী জানান, তার জমিতে উৎপাদিত বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপাদন করে বিক্রি করছি ২০ টাকা দরে আর ভোক্তারা কিনছেন ৫০ টাকা কেজি দরে। ৩০ টাকা করে লাভ করছেন ফরিয়া ও খুচরা বিক্রেতারা’।
তার দাবি, সরকারিভাবে যদি এসব সবজির মূল্য বেঁধে দেওয়া হতো, তাহলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে যেতো।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী মশিয়ার রহমান জানান, তারা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে যে দামে সবজি কিনছেন, তা থেকে কিছুটা লাভ রেখে সবজি বিক্রি করছেন ভোক্তাদের কাছে। অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জেলা বিপণন কর্মকর্তা গোলাম মারুফ খান বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে শৈলকূপা উপজেলার চড়িয়ারবিল বাজার ও সদর উপজেলার গান্না বাজারে দু’টি বিক্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে কৃষকদের কাছ থেকে ভোক্তারা সরাসরি সবজি কিনতে পারছেন। প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিংও করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি খরিপ মৌসুমে জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
এএসআর