সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকগুলো পাটকল বন্ধ থাকায় পাটের চাহিদা কমে গেছে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারণে উৎপাদিত পাট সরাসরি বিক্রির সুযোগও পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষকেরা।
এজন্য দ্রুত দেশের সব পাটকল চালু ও মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন কৃষক ও তাদের সংগঠনগুলো। সরকারিভাবে পাটের দাম মণপ্রতি তিন হাজার টাকা নির্ধারিত হলে কৃষক বাঁচবেন, সোনালী আঁশের ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলেও দাবি তাদের।
সরেজমিনে গেলে কেশবপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শমসের গাজী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবার তিন বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি পাট কাটা শেষ হয়েছে। আশা করছি, ৩০ মণ পাট পাবো’।
‘সব মিলে চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে পাটের দাম বর্তমানে বেশ কম, প্রতি মণ এক হাজার ২০০ টাকা। এ দামে পাট বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার টাকা পাবো। সে হিসেবে পাট চাষে এবার প্রায় ৯ হাজার টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছি’।
একই এলাকার পাটচাষি নজরুল ইসলাম ও আনসার ঢালী জানান, এক বিঘা (৪২ শতক) জমিতে পাট চাষে চাষ বাবদ এক হাজার টাকা, বীজে ৬০০ টাকা, নিড়ানিতে দুই হাজার টাকা, সেচে চার হাজার টাকা এবং সারে এক হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। চাষকৃত পাট কাটতে এখন বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা আর জমির লিজে আরো তিন হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
সব মিলে এক বিঘা জমিতে চাষের খরচ ১৭ হাজার ১০০ টাকা, যেখানে পাট পাওয়া যাচ্ছে ১০ মণ। এ হিসেবে মণপ্রতি উৎপাদন খরচ পড়ছে এক হাজার ৭১০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজার দরে ওই পাট বিক্রি করে তারা পাচ্ছেন ১২ হাজার টাকা। ফলে মৌসুম শেষে বিঘাপ্রতি ক্ষতি হতে যাচ্ছে পাঁচ হাজার ১০০ টাকা।
তবে চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৩১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে দাম কম ও কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি মানতে নারাজ যশোর কৃষি অফিস।
তাদের হিসেব বলছে, গত বছর পাটের চাষ হয় ৩০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৪০০ হেক্টর। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি পাট কাটা হয়ে গেছে। এক বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলে আট মণ পাট হয়। আর বিঘা প্রতি গড়ে খরচ হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা। ফলে মণপ্রতি পাটের উৎপাদন খরচ দুই হাজার ২৫০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে ফলনও ভালো এবং অন্য বছরের তুলনায় দামও বেশি। ফলে লাভবান হবেন কৃষকেরা’।
কৃষকদের লোকসানের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লোকসান হচ্ছে- এ কথা ভিত্তিহীন, কৃষকরা নেগেটিভ বলেন’।
এই কৃষি কর্মকর্তার দাবি, ‘দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি পাচ্ছেন চাষিরা, পাটখড়ি তো থাকছেই। এছাড়াও জমিতে পাট চাষের কারণে পাতা পচে জৈব সার তৈরি হয়। এতে পরবর্তী ফসলে ভালো ফলন হয়, সারের খরচও কমে যায়’।
এদিকে পাটের দাম মণপ্রতি তিন হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করছে কৃষক সংগ্রাম সমিতি।
সংগঠনের সভাপতি ডা. আব্দুল খালেক লস্কর বলেন, ‘দেশের অনেকগুলো পাটকল বন্ধ থাকায় পাটের দামে প্রভাব পড়েছে। এজন্য আমরা দ্রুত দেশের সব পাটকল চালু ও প্রতি মণ পাটের সর্বনিন্ম মূল্য তিন হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি। এসব দাবিতে গত ৩১ জুলাই শহরে মিছিল-সমাবেশ করে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি’।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৭
এএসআর