কৃষকরা জানান, বিক্রির জন্য না হোক, নিজেদের খাদ্যের জন্য হলেও ধান চাষের বিকল্প নেই তাদের। নিচু জমিতে এ মৌসুমে অন্য ফসল ফলানো সম্ভব নয়।
বন্যার পানিতে সমূলে বিনষ্ট হওয়া আমন খেতে পুনরায় চারা লাগাতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কোনো কোনো জমিতে সামান্য কিছু চারা জীবিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে চাষিরা উঁচু জমির আমনের কিছু চারা তুলে নিচু জমির শুন্য স্থান পুরণ করছেন। কেউ কেউ গরু ছাগলের খাদ্যের জন্য রেখে দেয়া বীজতলার চারা তুলে নতুন করে রোপণ করছেন। কিছু কৃষক আপদকালীনের জন্য রাখা চারাগুলো (বলান) তুলে নতুন করে রোপণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আবার চারার অভাবে রোপণ করতে পারছেন না। তারা চারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন হাট-ঘাট-মাঠ সর্বত্র। সব মিলে বন্যার ক্ষতি থেকে ঘুড়ে দাঁড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বানভাসি এলাকার কৃষকরা।
সদর উপজেলার কুলাঘাটের কৃষক মাসুদ রানা বাংলানিউজকে জানান, গেল বন্যায় তার আমন খেত পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে। আপদকালীনের জন্য রাখা বলানগুলো তুলে রোপণ করা হচ্ছে। জমি ফেলে রাখলে তো না খেয়ে মরতে হবে। তাই কোন রকম ঢেকে রাখছি খেত।
আদিতমারীর কমলাবাড়ি দোলাপাড়ার বর্গাচাষি ব্যাঙ চন্দ্র, মোতালেব ও সোমর আলী বাংলানিউজকে জানান, গরু ছাগলের খাদ্যের জন্য রাখা আমন বীজতলার উচ্ছিষ্ট চারা আজ পরম বন্ধু হিসেবে কাজে লাগছে। বানের পানিতে নষ্ট হওয়া মাঠে নতুন করে এসব চারা লাগানো হচ্ছে। খুব ভালো ফলন হয়তো হবে না ঠিকই তবুও যেটুকু হবে তা নিজেদের খাদ্যের যোগান হলেই বাঁচতে পারবে তাদের পরিবার।
মিলন বাজার এলাকার চাষি নিপিন চন্দ্র জানান, ধান গাছগুলো পচে গেছে বন্যার পানিতে। নতুন করে চারা লাগাতে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও চারা পাননি। তবে এ কৃষকের দাবি ঋণ হিসেবে হলেও সরকার যেন আমন ধানের চারা সরবরাহ করেন। তারা মাঠ ফাঁকা রাখতে চান না। মাঠ ফাঁকা হলে গোলা ফাঁকা থাকবে। এমন হলে না খেয়ে মরতে হবে যোগ করেন নিপিন চন্দ্র।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮২ হাজার ২৫৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৮৪ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এসব জমি থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধানের চারা রোপণের এক মাসের মধ্যে গেল বন্যার পানিতে ডুবেছে ৩১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির আমন খেত। যার মধ্যে ৮ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমির আমন খেত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি দ্বিগুণ ক্ষতি হয়েছে তাদের।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিধু ভুষন রায় বাংলানিউজকে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত যেসব খেতের ধান গাছে শিকড় রয়েছে সে গাছে কুঁড়ি গজাবে। সরকার চারা সরবরাহ করলে কৃষকদের বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট, ২০১৭
আরএ