ভরা মৌসুমে এখন পুরো জেলা জুড়েই চলছে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো, ধুয়ে রোদে শুকানো ও ঘরে তোলার কাজ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে মাঠের পর মাঠ বা রাস্তার ধারে বাঁশের আড় টানিয়ে সোনালী আঁশ রোদে শুকাতে দেখা গেছে।
পাটচাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের ফলন ও আঁশের রং বেশ ভালো হয়েছে। হাট-বাজারে পর্যাপ্ত দাম পেয়ে সকল ব্যয় মিটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশাবাদীও ছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই দাম কমে যাওয়ায় এখন উৎপাদন খরচ উঠিয়ে আনাটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ন্যায্যমূল্য না পেলে সাধারণ চাষীদের বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এ মৌসুমে সদর, শিবচর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলায় ৩৪ হাজার ৮৯২ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়, যা গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। দেশি তোষা ও মেস্তা জাতের চাষ বেশি করেছেন কৃষকেরা, ভারতীয় পাটের বীজ বুনেও বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন। চলতি বছর হেক্টর প্রতি ৮ থেকে ৯ বেল পাটের আঁশ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলার মধ্যে শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল, দত্তপাড়া, নিলখী, বহেরাতলা, শেখপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। অন্যান্য ফসলে তেমন লাভ না পেয়ে পাটের দিকে একটু বেশি ঝুঁকছেন চাষিরা। ভারতীয় বঙ্কিম-মহারাষ্ট্র ও জিআর ১২৪ জাতের বীজ বুনে ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা। গত বছরের ১২ হাজার হেক্টরের তুলনায় এ মৌসুমে শিবচরের ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে বলে জানায় উপজেলা সম্প্রসারণ অধিদফতর।
রাজৈর উপজেলার শ্রীকৃষ্ণদি এলাকার চাষী রাজ্জেক মোল্যা বলেন, ‘আমার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বিঘাপ্রতি পাট আসবে কমপক্ষে ৮ মণ করে। অথচ বিক্রি করতে গেলে উৎপাদনের খরচই উঠতে চায় না। কেননা, মণপ্রতি পাটের দাম বাজারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ টাকা’।
‘আমার মতো সকল চাষিরই একই অবস্থা। বাজারে দাম কম হওয়ায় খরচ উঠে লাভের টাকা আসছে না’।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিএম গফুর বলেন, ‘ভালো ফলনের জন্য আমাদের অফিস সব সময়ই কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। মাঠপর্যায়ে কাজ করেন কর্মীরা। এখন পাটের দাম ভালো হলেই কৃষকের লাভ আসবে, আরো বেশি ফলনে আগ্রহী হবেন’।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৭
এএসআর