চারা লাগানোর ৫০-৫৫ দিনের মাথায় ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো শুরু হয়। পনের দিন পরপর মরিচ উঠানো যায়।
এ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার করে মরিচ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত বা টাল থেকে প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত মরিচ উঠানো যায়। তবে সবকিছুই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর।
এই কৃষকের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। জমির আইলে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিলো তার সঙ্গে। আলাপচারিতায় এবারের মরিচ চাষ ও বাজার সম্পর্কে বাংলানিউজকে এসব কথাই জানালেন কৃষক ইউসুফ আলী।
তার এই গ্রামসহ উঁচুলবাড়ী, উদয়খুড়ি, পান্ডারপাড়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি গ্রামে কৃষকরা বিঘাকে বিঘা জমিতে শীতকালীন আগামজাতের মরিচ চাষ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজে ছেয়ে আছে মরিচের ক্ষেতগুলো। কোথাও কোথাও যা চোখের দৃষ্টিসীমাকেও ছাড়িয়ে যায়। সেসব ক্ষেত থেকে দলবেঁধে মরিচ উঠাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। ক্ষেতের কাছে যেতেই দেখা গেলো বাতাসে দোল খাচ্ছে গাছের চির সবুজ ঝুলন্ত কাঁচা মরিচগুলো।
জমির আইল ধরে এগোতেই একটি মরিচের ক্ষেতে জুয়েল ও বিপুল নামের দুই যুবকের দেখা মিললো। তাদের পিঠের পেছনে ঝুলছিলো অটো স্প্রে মেশিন। সেই মেশিনের সাহায্যে তারা রোগবালাই দমনে গাছে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন।
সেলিম রেজা, মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এসব গ্রামের অনেক কৃষক পরিবার এবার কমবেশি জমিতে মরিচ লাগিয়েছেন। প্রতিবিঘা জমি থেকে পনেরো দিন পরপর প্রায় ২০-২৫ মণ হারে মরিচ উঠানো যায়। শুরুতে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ ২০০০-২২০০ টাকা হারে বিক্রি হয়েছে। গেলো এক মাস আগেও এই মরিচ প্রতিমণ ৬০০০-৬৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে বর্তমানে ৩০০০-৩৩০০ টাকায় প্রতিমণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক শাহ আলম, বাদশা মিয়া বাংলানিউজকে জানান, শীতকালীন হিসেবে মরিচের চাষ এবার ব্যাপক ভালো হয়েছে। শুরু থেকেই ফলন ভাল হয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক মরিচ ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্ষেতের গাছ এখনো ঝিমিয়ে রয়েছে। কিন্তু সিংহভাগ ক্ষেতের মরিচ গাছ প্রায় ঠিক হয়ে গেছে।
এসব কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমির বিপরীতে সর্বমোট ৪৫-৫০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। এরমধ্যে বেশির ভাগ ব্যয় পড়ে শ্রমিক ও কীটনাশক বাবদ। কারণ মরিচ গাছগুলো ঠিক রাখতে প্রায়ই প্রতিদিনই নিয়মানুযায়ী ওষুধ স্প্রে করতে হয়। সর্বোপরি ক্ষেতের গাছগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ নজরদারির মধ্যে রাখতে হয়। সবমিলে কাঁচা মরিচের ঝালে বেজায় খুশি তারা যোগ করেন এসব কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, গাবতলী সবজিখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এসব উপজেলার কৃষকরা অনেক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এবার শীতকালীন মরিচের ফলন হয়েছে বাম্পার। কৃষক তার উৎপাদিত মরিচের দামও অনেক ভাল পাচ্ছেন।
তবে অতি সম্প্রতি বৃষ্টিপাতের কারণে মরিচ ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলেও স্বীকার করেন কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এমবিএইচ/বিএস