ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আমনের হাসির ঝিলিক চাষির মুখেও

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
আমনের হাসির ঝিলিক চাষির মুখেও আনন্দে ভাসছেন সোনালী ধান নিয়ে ঘরে ফেরা কৃষাণিও। ছবি: আবু বকর

সিলেট: বোরো-আউশ, দু’টিই তলিয়েছে বানের পানিতে। তবু মন ভাঙেনি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর আত্মবিশ্বাসে রোপা-আমনের ক্ষেত করেন সিলেটে সুরমা তীরের লামাকাজি এলাকার আফাজ উদ্দিন। এবার সফল হয়েছেন তিনি। অগ্রহায়ণে ঘরে তুলছেন সোনালী ধান।   

আফাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‌‘বরুয়া (বোরো)-আউশ দু’টোই পানিয়ে নিয়েছে। ইবার আল্লায় মায়া খরছইন (করেছেন)।

ধার-করজ করিয়া দুই ছেলেরে নিয়া কষ্টমিষ্ট করে ক্ষেত খরছি (করছি)। আল্লায় দিয়া গেছইন’।

এতো ঝড়-ঝাপ্টা সহ্য করে টিকে থাকার নামইতো সংগ্রাম। দেশের খাদ্যভাণ্ডার স্বয়ং সম্পন্ন করতে বেগ পোহাতে হয় আফাজ উদ্দিনের মতো কৃষকদের।

পাশের ক্ষেতের ফারুক মিয়াও খুশি ভালো ফলনে। ৮ কেদার (২৪০ শতক) জমিতে কঠোর পরিশ্রমে ফলিয়েছেন স্বপ্নের ফসল। তবে বর্গা ক্ষেত করায় মালিকের সঙ্গে ভাগাভাগিতে চলে যাবে অর্ধেক ধান।

জমির মালিক বীজ ও চাষাবাদে সহায়তা করায় অর্ধেকটা তাকে দিতে হবে এমন মন্তব্য ফারুক মিয়ার।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) প্রকৃতিতে যথানিয়মে এসেছে অগ্রহায়ণ। মূলত; এ মাসেই কাস্তে হাতে ধান ঘরে তুলতে শুরু করেন কৃষাণ-কৃষাণিরা।

সরেজমিনে সিলেট সদর উপজেলার লামাকাজি, টুকেরবাজার ও দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে কোথাও কোথাও শুরুও হয়ে গেছে ধান কাটা। রোপা আমনের ধানের সোনালী হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়েছে পর পর দু’বার পোড় খাওয়া হাজারো কৃষক পরিবারের মুখেও।

বোরো ও আউশে অতিবৃষ্টি-বন্যার বাগড়ায়  চাপা কষ্ট, শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা নিয়ে আমন ক্ষেতে নামতে হয়েছে বলে জানান চাষিরা।

আমনের ক্ষেতে এখন ধান কাটার উৎসব।  ছবি: আবু বকরকৃষক হাসলেই দেশ হাসে- এর দৃষ্টান্ত আমনের বাম্পার ফলন। কৃষকদের শ্রমে-ঘামে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খুশি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা। দু’টি ফসল হারানোর পর এবার আমন নিয়ে নির্ভার তারাও।

চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগের চার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে- দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের।  

বিভাগে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমিতে। এর চেয়েও বেশি জমিতে ফসল ফলিয়েছেন চাষিরা। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৯ লাখ ৫২ হাজার ৮১২ মেট্রিকটন এবং তা সহসাই পূরণ হচ্ছে- মন্তব্য সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদের।

তিনি বলেন, ‘সিলেট জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৪৩ মেট্রিকটন,  মৌলভীবাজারে ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪০ মেট্রিকটন,  হবিগঞ্জে ৭৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৯৩ মেট্রিকটন এবং সুনামগঞ্জে ৬১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৬ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিলাম। কৃষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে’।

হাওর অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্মের তথ্য অনুসারে, বন্যায় বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সিলেটে ৪৫০ কোটি টাকা, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা, হবিগঞ্জে ৬৬১ কোটি টাকা ও মৌলভীবাজারে ২৪৬ কোটি টাকা।

ফসলের মাঠের এ হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়েছে চাষিদের ঘরে ঘরেও।  ছবি: আবু বকরব্যাপক এ ক্ষয়-ক্ষতির পর সব হারানো কৃষকেরা রোপা আমন আবাদে মনোযোগী হন। আশানুরূপ ফলনে সে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নপূরণের আনন্দে ভাসছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
এনইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।