আট বিঘা ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ করেছেন বিজন বৈদ্য। গত বছর প্রতি কেজি ১২শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে আলাপকালে চিংড়ি চাষি বিজন বাংলানিউজের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, এবার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যারা ব্যাংক লোন নিয়েছেন তাদের মরার উপর খাড়ার ঘাঁ! দাম কমে যাওয়ায় হাজার হাজার চিংড়ি চাষির পথে বসার অবস্থা হয়েছে। সরকার আমাদের দিকে একটু তাকালে অনেক উপকার হয়।
গলদা চিংড়ি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাদা সোনা নামে খ্যাত রপ্তানিজাত গলদা চিংড়ির দামে আকস্মিক ধস নেমেছে। এতে চিংড়ি চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় গলদার দাম হ্রাস পেয়েছে। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে গলদা চিংড়ি রপ্তানি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
মৎস্য অফিস সূত্র ও গলদা চিংড়ি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলায় ১০ লক্ষাধিক ছোট-বড় গলদা চিংড়ির ঘের আছে। দেশের গলদা চিংড়ির সবচেয়ে বড় বাজার ছিল যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ায় গলদা চিংড়ি কিনছে না যুক্তরাজ্য। এ কারণে চাষিরা স্থানীয় বাজারে কম দামে গলদা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। রফতানিকারকদেরও মাথা হাত পড়েছে। সরকারও হারাচ্ছে বিশাল আকারের বৈদেশিক মুদ্রা।
মহানগরীর কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য বাজারের মুজাহিদ ফিশের আড়তদার আবু মুসা বাংলানিউজকে জানান, ৫ গ্রেডের গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকায়, ৮ গ্রেডের ৫৫০ টাকা, ১০ গ্রেডের ৫০০ টাকা, ১২ গ্রেডের ৪০০ টাকায় কিনেছেন।
তিনি জানান, ইউকে না নিলেও স্পেন, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম বাংলাদেশ থেকে গলদা চিংড়ি আমদানি করছে। এর ফলে কোনো মতে চিংড়ি খাত টিকে আছে।
গলদার দাম রুই-কাতলা মাছের মতো হওয়ায় অনেকে দৈনন্দিন খাবার তালিকায় গলদাকে রাখছেন বলেও জানান আড়তদার আবু মুসা।
গলদা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিতে মাছ সরবরাহকারী রূপসার জ্যোতি ফিশের জয়দেব দাশ জানান, গত বছর গলদা চিংড়ির যে দাম ছিলো এ বছর তার অর্ধেকও নেই।
মোংলার ভাই ভাই ফিশের মালিক মো. লোকমান মোল্লা বলেন, ৫ গ্রেডের মাছ এখন ৭শ’ টাকা। ৮ গ্রেডের মাছ এখন সাড়ে ৬শ’ টাকা। গত বছর ৫ গ্রেড ছিলো ১২শ’ টাকা, ৮ গ্রেড ছিলো ১ হাজার টাকা। পানির দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি আমাদের এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায়।
বিদেশে মাছের সুনাম নষ্ট হওয়ায় চাহিদা কমে গেছে চিংড়ি খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরোপ ও আমেরিকায় চাহিদা না থাকার পাশাপাশি গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর চিংড়িতে জেলিসহ অপদ্রব্য পুশ করে। তারা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশি গলদার বাজার নষ্ট করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ মো. আব্দুল বারি বাংলানিউজকে বলেন, ইউকের বাজারে গলদা চিংড়ির চাহিদা কমে গেছে। যেটার দাম গত বছর ১২ ডলার ছিলো সেটির দাম এ বছর ৮ ডলার। যে কারণে আমাদের স্থানীয় বাজারে গলদা চিংড়ির দামেও ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমআরএম/এমজেএফ