সরেজমিনে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়াসহ একই ইউনিয়নের আরও কয়েকটি এবং পাশের বড়হরিশপুর ইউনিয়নের কয়েকটি মিলে মোট ২০টির মতো গ্রামে ১৪০ ধরনের ভেষজ উদ্ভিদের চাষাবাদ হয়, যার সিংহভাগই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রতি মৌসুমে গ্রামগুলোর ৬৫ হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ঘৃতকুমারীর চাষ হয়ে উৎপাদিত হয় প্রায় ১৪ হাজার ১৩০ মেট্রিকটন।
চাষিরা জানান, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অ্যালোভেরা রোপণ মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৮ হাজার চারার প্রয়োজন হয়। রোপণের একমাস পর থেকে পাতা সংগ্রহ শুরু হয়ে ৯ মাস পর্যন্ত চলে। চাষাবাদ, পরিচর্যা, সেচ কাজ ও পাতা উত্তোলনে বছরে বিঘাপ্রতি শ্রমিক লাগে ১১০ জন।
ক্ষেতে জৈবসার ছাড়াও পরিমাণমতো অন্যান্য সারও দিতে হয়। পাতার কালো দাগ পড়া রোধে চুন এবং পাতা ছিদ্রকারী মশাসহ অন্যান্য কীট-পতঙ্গ দমনে ছত্রাকনাশক টাইকোডার্মা ও সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করা হয়।
কৃষক সাদেক আলী ও রব ভূঁইয়া জানান, অ্যালোভেরা চাষাবাদে বিঘায় সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে একবার চারা রোপণ করলে ৩০/৩৫ বছর পর্যন্ত আর চারার প্রয়োজন হয় না। এজন্য প্রতি বছর চারার বাড়তি খরচ হয় না।
বিঘায় ৯০/৯৫ গাড়ি বা ৮০০ মণ অ্যালোভেরা উৎপাদিত হয়। এক গাড়ির দাম পাওয়া যায় ৬ হাজার টাকা। এ হিসাবে বিঘায় ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার বিক্রি করা সম্ভব। এতে খরচ বাদে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা থাকার কথা।
কৃষকদের অভিযোগ, কিন্তু সে লাভ পান না তারা। কারণ, অ্যালোভেরার পাতা সংরক্ষণের সুযোগ নেই এবং বাজারজাতকরণের অসুবিধায় উৎপাদিত পণ্যের মোট ৬০ ভাগ শতাংশ বিক্রি করা যায়। বাকি ৪০ শতাংশ নষ্ট হয় জমিতেই।
ক্রেতা পর্যন্ত বিপণন কাজে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের কারণে এ পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। তাইওয়ান সিন লিন কোম্পানির একজন ক্রয় প্রতিনিধির এলাকায় অবস্থানের কথা থাকলেও তার হদিস পাওয়া যায় না।
কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, ২৫ কেজি অ্যালোভেরার বাক্স তাইওয়ান কোম্পানির কাছে বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। আর শরবত তৈরিতে ৩০০ কেজির প্যাকেটের বিক্রয় মূল্য ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ কৃষকরা সাড়ে ৩ টাকা কেজি দরে অ্যালোভেরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান তথ্যে দর নির্ধারিত রয়েছে ১০ টাকা।
কৃষক আলফাজুল আলমের মতে, ঔষধি গ্রামে বছরে ৭০/৮০ কোটি টাকার অ্যালোভেরা উৎপাদিত হয়। সরাসরি কোম্পানি স্থানীয় বাজার থেকে কিনে নিলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরির মাধ্যমে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।
এজন্য সিন্ডিকেট ভাঙতে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক কঠোর পদক্ষেপের দাবি করে আসছেন ভেষজচাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম জানান, কৃষকদের কাছ থেকে কোম্পানিগুলোর সরাসরি পণ্য কেনাতে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঔষধি পণ্য, বিশেষ করে অ্যালোভেরা প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন ভেষজ গ্রামকে নাটোরের ঐতিহ্য উল্লেখ করে বলেন, কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে সব ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়াসহ কার্যকরী ভূমিকা রাখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এএসআর
** ভেষজ বিপ্লবে গ্রামের খ্যাতি দেশজুড়ে
** ঔষধি গ্রামকে আত্মনির্ভরশীল করে গেছেন আফাজ পাগলা