ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

হাওরবাসীর ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম এবার বোরোর মাঠে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
হাওরবাসীর ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম এবার বোরোর মাঠে যেসব স্থানে একটু আধটু চর জেগেছে, সেখানেই চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। ছবি: বাংলানিউজ

মেন্দিপুর, জগন্নাথপুর (খালিয়াজুরী) নেত্রকোনা ঘুরে: বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, আর্থিক অভাব-অনটনসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা বাধাগ্রস্ত করছে জীবিকা আর চলার পথকে। তারপরও থেমে নেই হাওরবাসীর জীবন সংগ্রাম।

ভয়াল প্রকৃতির আগ্রাসন আর নিঠুর দারিদ্র্যের কষাঘাতের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ক্ষেতের ফসল-উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ আর স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন লড়াইয়ে নামছেন তারা।

চলমান আমন মৌসুমের ধানও হারিয়ে এবার আসন্ন বোরো মৌসুমকে ঘিরে নতুন জীবন সংগ্রামে নেমেছেন হাওরের চাষিরা।

আর জেলেরা ব্যস্ত মাছ ধরতে খালে-বিলে নামার প্রস্তুতিতে।  

মাছ ধরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন জেলেরাও।                                          ছবি: বাংলানিউজ অকাল বন্যায় কয়েক দফায় ফসল হারিয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার হাওরাঞ্চলবাসী। ফসলের মাঠ থেকে এখনও নেমে যায়নি সে পানি! ফলে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যে যে সময়টাতে বীজতলা তৈরি কিংবা বীজতলায় পরিপূর্ণ থাকার কথা, ঠিক সে সময়টাতে পানিবন্দি ক্ষেতে পড়ছে কৃষকের দীর্ঘশ্বাস।

তারপরও হাল ছাড়েননি তারা। যেসব স্থানে একটু আধটু চর জেগেছে, সেখানেই চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক। জীবনে একটু স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে দিন-রাত এক করে বীজতলা তৈরি করে চলেছেন ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলো।

উপজেলার হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসের আকস্মিক আগাম বন্যায় হাওরের কাঁচা ও আধাপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। জুলাইয়ের শেষ দিকে শুরু হয় ফের বন্যা। দীর্ঘমেয়াদী সে বন্যার পানি নামেনি এখনো। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি রয়েছে। ফলে গতবারের বোরোর পর চলতি আমন মৌসুমের ধানও ঘরে তুলতে পারেননি হাওরের চাষিরা।

হাওরবাসী বলছেন, দু’দফার বন্যায় ফসলের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু-পাখি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, এমনকি হাওরের মাছ পর্যন্ত হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেখা দিয়েছে আরও নানা ধরনের সংকট। তারপরও থেমে নেই তারা। স্বাভাবিক জীবনে ফেরা বা ঘুরে দাঁড়ানোর এ সংগ্রাম চলবেই।

খালিয়াজুরীর মেন্দিপুর ইনিয়নের ইছাপুর গ্রামের কৃষক জ্যোতিন্দ্র সরকার (৬৫) বাংলানিউজকে জানান, বন্যার পানিতে তার আট কাঠা জমির ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। তারপর রাখার জায়গা ও খাদ্যের অভাবে গরু-ছাগল বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। তালিকায় নাম তুলতে না পারায় পাননি কোনো সরকারি সাহায্য-সহযোগিতাও। একবেলা আধবেলা খেয়ে, আবার কখনো না খেয়েও পরিবার নিয়ে দিন পাড়ি দিয়েছেন। ঘুরে দাঁড়াতে এবারও ধার-দেনা করে নিজের ছয় শতাংশ জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরি করছেন।

ওই গ্রামেরই বৃদ্ধ কৃষক সুভাষ সরকার (৬০) বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও কৃষক সহায়তা না হয় নাই পেয়েছিলাম, অন্তত জেলে সহায়তা তো পেতে পারতাম। জেলে জনগোষ্ঠীরও মানুষ আমরা। কিন্তু কিছুই পেলাম না!’

তবে সরকার থেকে বীজ সহায়তা পেয়ে বীজতলা তৈরি করছেন বলে জানিয়েছেন কৃষক বিধান সরকার (৪০) ও আইয়ুব আলী মিয়া (৫৫)।

জীবন সংগ্রামে অগ্রসর হাওরের নারীরাও।  ছবি: বাংলানিউজতাদের অভিযোগ, বীজ সহায়তা পাওয়া নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের জটিলতা। কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি সরকারি বীজ দিয়ে টাকা নিচ্ছেন। যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তারা বীজ সহায়তা পাচ্ছেন না।

মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের তৈয়ব আলী ও রহিমা বেগম জানান, জীবিকার তাগিদে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরতে জাল বুনছেন তারা। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্বে মাছ ধরতেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

এখলাছ বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে আমরা না খেয়ে মারা যাবো। বন্যায় সবই খাইলো, বিনিময়ে কোনো কোনো নেতার পেট ভরলো! তারপরও তাদের তাদের খিদা মেটে না। টিভি-পত্রিকা সবখানে দেখি, সরকার আমাদের সহযোগিতা কম করেনি। কিন্তু তাতে কি হবে? সহযোগিতা আমাদের হাতে পৌঁছানোর আগেই তো নেতাদের পেটে হজম হয়!’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।