ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কচি লাউয়ের ডগায় দুলছে কৃষকের স্বপ্নও

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
কচি লাউয়ের ডগায় দুলছে কৃষকের স্বপ্নও লাউয়ের ক্ষেতের হাসি ছড়িয়েছে চাষিদের মুখেও। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: গ্রামের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই লাউয়ের ছড়াছড়ি। মাঠের পর মাঠ জুড়ে, বাড়ির উঠোনে, ঘরের চালায়, বড় বড় গাছে গাছে, রাস্তার দুই পাশে, এমনকি ঘরের সামনের ফাঁকা জায়গাগুলোতেও মাচায় মাচায় দুলছে লাউ আর লাউ।

গাছের প্রতিটি কচি ডগায় লাউ আর সবুজ পাতার সমাহারে দুলছে কৃষকের স্বপ্নও।
 
সরেজমিনে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত নশরতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লাউকে ঘিরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে বিশাল কৃষি কর্মযজ্ঞ।

নারী-পুরুষ ও শিশুরা মাঠ জুড়ে ক্ষেত থেকে লাউ ওঠাতে ব্যস্ত। কেউ লাউ কাটছেন, কেউ ভ্যানগাড়িতে সাজাচ্ছেন। রোদ ওঠার আগেই নিয়ে যাচ্ছেন আড়তে।
 
মোট ৬০ বিঘা জমিতে লাউয়ের আবাদে গ্রামটির শতাধিক চাষির ভাগ্য বদলে গেছে, হয়েছেন স্বাবলম্বী। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসারের সমস্ত খরচ চলে লাউ বিক্রি করে।

চাষিরা জানান, কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের পরিবর্তে সেক্স ফেরোমন ও প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করছেন তারা। এতে বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে তাদের লাউয়ের চাহিদাও বাড়ছে।
বছরে এ গ্রামে লাউ উৎপাদিত হচ্ছে কোটি টাকার, প্রতিদিন বিভিন্ন কাঁচাবাজার ও আড়তে যাচ্ছে অন্তত ৩ হাজার পিস করে। ফলে গতি পেয়েছে অর্থনীতির চাকাও।

কৃষকেরা আরও জানান, আগে যেসব জমিতে আখ ও কলা উৎপাদিত হতো, এখন সেখানে বাণিজ্যিকভাবে লাউয়ের চাষ হচ্ছে। কারণ, অল্প জমিতে আখ-কলার তুলনায় লাউয়ের আবাদ লাভজনক। লাউই তাই এখন এ গ্রামের প্রধান অর্থকরী ফসল।
 
কৃষি বিভাগ জানায়, সাধারণত আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি বা শেষদিকে লাউয়ের চারা রোপণ করতে হয়, ৫০/৬০ দিনের মাথায় উত্তোলন করা যায়। উন্নতজাতের বীজ রোপণ আর নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হয়।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, ২০১০ সালে কৃষক আব্দুর রাজ্জাক প্রথমে ২৫ শতক জমিতে লাউ চাষ করে সফল হন। তাকে দেখে আরো অনেকেই শুরু করেন। ভালো ফলন হওয়ায় পরে আস্তে আস্তে এর বিস্তৃতি ঘটে।

সাইফুল ইসলাম জানান, পাঁচ বছর ধরে লাউয়ের চাষ করছেন তিনি। বিঘাপ্রতি জমিতে আবাদে ২০/২২ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমি থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া লাউ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এ মৌসুমেই অন্তত এক লাখ টাকার লাউ বিক্রির আশা করছেন তিনি।
 
সোলেমান আলীসহ অনেক কৃষক জানান, এবার লাউয়ের বাজার খুবই ভালো। প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দাম থাকলে বিঘাপ্রতি খরচ বাদে ৪০/৫০ হাজার টাকা লাভ হবে।
 
নাটোর স্টেশন বাজারের সবজি আড়তের পাইকারি ক্রেতা দুলাল হোসেন জানান, নশরতপুরে চাষ করা লাউয়ে বিষ নেই। তাই সেগুলো কিনে বিক্রিতে সমস্যায় পড়তে হয় না। ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এবার জেলার ২০০ হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ হয়েছে। সদর, নলডাঙ্গা ও লালপুর উপজেলায় বেশি আবাদ হয়েছে।
 
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম জানান, লাউ উৎপাদনে সেচ, সার ও শ্রমিক খরচ কম হয়, পোকা-মাকড় খুব ক্ষতি করতে পারে না, ফলনও ভালো হয়। এজন্য কৃষকেরা লাউ চাষে ঝুঁকছেন।

নশরতপুর গ্রামের উৎপাদিত লাউ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।